অসমাপ্ত ভালবাসাঃ
যেদিন তোমায় প্রথম প্রপোজ করেছিলাম সেদিন তোমার হাত থেকে বই গুলা পরে গেছিলো। ষ্মার্টনেস দেখাতে তরিঘরি করে বই গুলা তুলে দিতে গেছিলাম। কিন্তু নিজেই পিছলে তোমার ছড়ানো বইগুলার সাথে পরে রয়েছিলাম রাস্তায়। ঠিক সে মুহুর্তেই বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা পাখিটা ইয়ের বোমাটা করে দিছিলো আমার একদম মুখে। মনের ভুলে রুমালটাও আনতে ভুলে গেছিলাম। তখন তুমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তোমার রুমালটা আমাকে দিছিলা। রুমালটা নিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় তখনো আমার কানে আসছিলো তোমার সেই হাসির আওয়াজ.…
এপ্রিলের নয় তারিখ। সেদিন একটা গোলাপ দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তোমায় আবার প্রপোজ করি। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমাকে একসেপ্ট করবা।সেদিন আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেছিলো। মোবাইলটা নিতে গিয়ে উল্টে পরে গিয়েছিলাম। সেদিন তুমি আমার নাম দিছিলা 'উষ্টা বাবু'। তোমার সেই 'উষ্টা বাবু' ডাকটা শুনতে অনেক মিষ্টি লাগতো।
সেইদিন বৃষ্টির ভেতর তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে আছে তোমার?? আমি একটু সাইডে হিসু করতে গেছিলাম আর তোমাকে বৃষ্টির ভেতর একা দেখে একটা ছেলে ভাব নিতে ওর নিজের ছাতাটা তোমাকে দেয়। আমি তখন রেগে গিয়ে তোমার কাছে জোরে হেটে যেতে গিয়ে কাদায় পিছলে পরে যাই। তুমি ছেলেটিকে ছাতাটা ফেরত দিয়ে দৌড়ে ছুটে এসেছিলে আমার কাছে। বলেছিলে, 'আমার উষ্টা বাবু, উঠো বৃষ্টির ভেতর রাস্তায় ঘুমাতে নেই'
মনে আছে সেইদিন ঘুরতে গিয়ে তোমার বাবা কে দুর থেকে আসতে দেখি। দুজন দুই দিকে দৌড় লাগাই। তুমি তো ঠিকই দৌড় দিয়ে লুকিয়েছিলা কিন্তু আমি দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পরি। আমার ঠোঁট কেটে রক্ত পরে। তুমি তখন বাবার ভয় আগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছিলা আমার কাছে। আমি তখন আমার রুমাল খুজছিলাম। কিন্তু সেইদিন ও ভুলে রুমাল এনেছিলাম না। তুমি তখন তোমার একহাতে রুমাল দিয়ে আমার ঠোঁট মুছে দিচ্ছিলা আর আরেক হাত দিয়ে আমার কাধে কিল মারছিলা। তোমার চোখে সেদিন প্রথম জল দেখেছিলাম। তোমার বাবা আমাদের পাশ দিয়েই চলে গেছিলেন। মুখে তার ছিলো মুচকি হাসি।
এপ্রিলের নয় তারিখেই আমাদের বিয়ে হয়। সেইদিন বাসর ঘরে সব মালা ছিড়ে ফেলেছিলা তুমি। সব ফুল বিছানার এক যায়গায় জড় করেছিলা। তারপর ফুলের স্তুপ অর্ধেক করে নিজের অর্ধেক থেকে আমার মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিয়েছিলা আমিও তখন বাকি অর্ধেক ফুল তোমার মাথায় ছিটিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে আছে বাসর ঘরে গ্লাসে করে শরবত খাওয়াতে গিয়ে পুরা গ্লাস আমার মাথায় ঢেলে দিছিলা!! মুছতে গিয়া দেখি রুমাল নেই। তুমি খুব হেসেছিলা। বলেছিলা তুমি নাকি আগেই জানতে যে আমার কাছে রুমাল থাকবে না। তখন তোমার রুমালটা দিয়ে আমাকে মুছে দিছিলা। সেদিন তোমাকে, তোমার হাসি অনেক সুন্দর লাগছিলো।
প্রতিদিন সকালে এককাপ চা বানাতে আমার জন্য। আমার অর্ধেক খাওয়া হলে তুমি কাপটা কেড়ে নিতা। নিয়ে বাকি অর্ধেক তুমি খেতা। বাজারে অনেক খুজে খুজে একটা বড় থালা কিনেছিলা তুমি। তুমি আমি সামনে বসে একসাথে সেই থালায় খেতাম। তুমি আমাকে খাইয়ে দিতা আমিও তোমাকে খাইয়ে দিতাম। আমাদের গ্লাস ও একটাই ছিলো।
বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তিতে স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা তুমি। আমি তো দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ই তো নিলানা। আর কখনো নিবেও না। কি এক অভিমান করে চলে গেছো আমাকে একা করে।
জানো এখনো সেই বড় থালায় খাবার খাই আমি। অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক নষ্ট করি। সকালের সেই অর্ধেক কাপ চা এখনো পরে থাকে। কিন্তু বাকিটুকু আর তুমি কেড়ে খাও না।
জানো আজ এপ্রিলের নয় তারিখ। এই গোরস্থানে আসার পথেও পরে গেছিলাম আমি। কিন্তু 'উষ্টা বাবু' বলে কেউ আর আমাকে ডেকে তুলেনি। দেখো তোমার জন্য গোলাপ এনেছি। পরে গিয়ে একটু মাটি লেগেছে ফুলটায়। তোমার কি পছন্দ হয় নি? দেখো আমি কাঁদছি। চোখ মুছবো রুমালটাও আনতে ভুলে গেছি। কই আমার চোখের জল তো তুমি তোমার রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছনা। এতোটাই পর করে দিলে আমায়? এভাবে আমাকে ভুলে একা একা কি করে আছো তুমি??
আমাদের বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তি হবার কথা ছিলো আজকে। তুমি স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা আমার কাছে। হ্যা আমি তোমাকে আজ সেটা দিবো। আমি ই তোমার সেই স্পেশাল কিছু। আজ নিজেকে গিফ্ট করবো তোমাকে। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্য আর সম্ভব না। আমি আসছি তোমার গিফ্ট হয়ে।
সকাল বেলা নিমতলা গোরস্থানের একটি কবরের কাছে মানুষের ভিড়। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একজন মৃত যুবক একটি কবর জড়িয়ে ধরে নিথর পরে আছে। যুবকের এক হাতে ছিলো একটি লাল গোলাপ, অপর হাতে ছিলো একটি বিষের বোতল।.
এপ্রিলের নয় তারিখ। সেদিন একটা গোলাপ দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তোমায় আবার প্রপোজ করি। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমাকে একসেপ্ট করবা।সেদিন আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেছিলো। মোবাইলটা নিতে গিয়ে উল্টে পরে গিয়েছিলাম। সেদিন তুমি আমার নাম দিছিলা 'উষ্টা বাবু'। তোমার সেই 'উষ্টা বাবু' ডাকটা শুনতে অনেক মিষ্টি লাগতো।
সেইদিন বৃষ্টির ভেতর তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে আছে তোমার?? আমি একটু সাইডে হিসু করতে গেছিলাম আর তোমাকে বৃষ্টির ভেতর একা দেখে একটা ছেলে ভাব নিতে ওর নিজের ছাতাটা তোমাকে দেয়। আমি তখন রেগে গিয়ে তোমার কাছে জোরে হেটে যেতে গিয়ে কাদায় পিছলে পরে যাই। তুমি ছেলেটিকে ছাতাটা ফেরত দিয়ে দৌড়ে ছুটে এসেছিলে আমার কাছে। বলেছিলে, 'আমার উষ্টা বাবু, উঠো বৃষ্টির ভেতর রাস্তায় ঘুমাতে নেই'
মনে আছে সেইদিন ঘুরতে গিয়ে তোমার বাবা কে দুর থেকে আসতে দেখি। দুজন দুই দিকে দৌড় লাগাই। তুমি তো ঠিকই দৌড় দিয়ে লুকিয়েছিলা কিন্তু আমি দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পরি। আমার ঠোঁট কেটে রক্ত পরে। তুমি তখন বাবার ভয় আগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছিলা আমার কাছে। আমি তখন আমার রুমাল খুজছিলাম। কিন্তু সেইদিন ও ভুলে রুমাল এনেছিলাম না। তুমি তখন তোমার একহাতে রুমাল দিয়ে আমার ঠোঁট মুছে দিচ্ছিলা আর আরেক হাত দিয়ে আমার কাধে কিল মারছিলা। তোমার চোখে সেদিন প্রথম জল দেখেছিলাম। তোমার বাবা আমাদের পাশ দিয়েই চলে গেছিলেন। মুখে তার ছিলো মুচকি হাসি।
এপ্রিলের নয় তারিখেই আমাদের বিয়ে হয়। সেইদিন বাসর ঘরে সব মালা ছিড়ে ফেলেছিলা তুমি। সব ফুল বিছানার এক যায়গায় জড় করেছিলা। তারপর ফুলের স্তুপ অর্ধেক করে নিজের অর্ধেক থেকে আমার মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিয়েছিলা আমিও তখন বাকি অর্ধেক ফুল তোমার মাথায় ছিটিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে আছে বাসর ঘরে গ্লাসে করে শরবত খাওয়াতে গিয়ে পুরা গ্লাস আমার মাথায় ঢেলে দিছিলা!! মুছতে গিয়া দেখি রুমাল নেই। তুমি খুব হেসেছিলা। বলেছিলা তুমি নাকি আগেই জানতে যে আমার কাছে রুমাল থাকবে না। তখন তোমার রুমালটা দিয়ে আমাকে মুছে দিছিলা। সেদিন তোমাকে, তোমার হাসি অনেক সুন্দর লাগছিলো।
প্রতিদিন সকালে এককাপ চা বানাতে আমার জন্য। আমার অর্ধেক খাওয়া হলে তুমি কাপটা কেড়ে নিতা। নিয়ে বাকি অর্ধেক তুমি খেতা। বাজারে অনেক খুজে খুজে একটা বড় থালা কিনেছিলা তুমি। তুমি আমি সামনে বসে একসাথে সেই থালায় খেতাম। তুমি আমাকে খাইয়ে দিতা আমিও তোমাকে খাইয়ে দিতাম। আমাদের গ্লাস ও একটাই ছিলো।
বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তিতে স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা তুমি। আমি তো দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ই তো নিলানা। আর কখনো নিবেও না। কি এক অভিমান করে চলে গেছো আমাকে একা করে।
জানো এখনো সেই বড় থালায় খাবার খাই আমি। অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক নষ্ট করি। সকালের সেই অর্ধেক কাপ চা এখনো পরে থাকে। কিন্তু বাকিটুকু আর তুমি কেড়ে খাও না।
জানো আজ এপ্রিলের নয় তারিখ। এই গোরস্থানে আসার পথেও পরে গেছিলাম আমি। কিন্তু 'উষ্টা বাবু' বলে কেউ আর আমাকে ডেকে তুলেনি। দেখো তোমার জন্য গোলাপ এনেছি। পরে গিয়ে একটু মাটি লেগেছে ফুলটায়। তোমার কি পছন্দ হয় নি? দেখো আমি কাঁদছি। চোখ মুছবো রুমালটাও আনতে ভুলে গেছি। কই আমার চোখের জল তো তুমি তোমার রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছনা। এতোটাই পর করে দিলে আমায়? এভাবে আমাকে ভুলে একা একা কি করে আছো তুমি??
আমাদের বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তি হবার কথা ছিলো আজকে। তুমি স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা আমার কাছে। হ্যা আমি তোমাকে আজ সেটা দিবো। আমি ই তোমার সেই স্পেশাল কিছু। আজ নিজেকে গিফ্ট করবো তোমাকে। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্য আর সম্ভব না। আমি আসছি তোমার গিফ্ট হয়ে।
সকাল বেলা নিমতলা গোরস্থানের একটি কবরের কাছে মানুষের ভিড়। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একজন মৃত যুবক একটি কবর জড়িয়ে ধরে নিথর পরে আছে। যুবকের এক হাতে ছিলো একটি লাল গোলাপ, অপর হাতে ছিলো একটি বিষের বোতল।.
লাবণীর কান্না ঃ
যেদিন লাবণী কেঁদেছিল
লিখেছেন লাবণী
একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার হল , মুখ ফুটে "কোথায় যাও" ছাড়া আর কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে । অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা । কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই ভালবাসা বলে।
আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল । হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে হয় । মা - বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায় করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে যায় । সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায় চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি ই বলেছেন " প্রেম স্বর্গ থেকে আসে " ।
অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু তার ভালবাসার জন্য ।
লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে । হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন ভালবাসবি ? এই রকম "কেহ দেখিবে না মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না মোর অশ্রুবারিচয় " আর কত করবি ? গিয়ে বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?
অরন্যঃ "কিন্তু তানিয়া , ও যদি না করে তাহলে ?"
আমি বললাম (তানিয়া) "না করলে করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন রাখবি?"
অরন্যঃ "তর কথাও ঠিক । বলতে হবে আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই হ্যা করবে । "
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি , তানিয়া ।
" আমি তোমাকে ভালবাসি" , পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা । সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন । যত বেশি ভালবাস, তত বেশি হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয় দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে , হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।
লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই । অরণ্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে গেলো । হয়তো একেবারেই চলে গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য । আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে , সারাজীবন ।
তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে ভালবাসে তারমানে এই না যে অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে । লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।
অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে । যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের আলমারিতে মারলো । সরাসরি লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো । তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে আসল ।
লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায় ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?
অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই প্রেমে পড়ে যাই ।
লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি । তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ ।
লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই । প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার । যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই , ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু । তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে যেতে পারো ।
অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম থেকে আমি কি পাব তা কখনো চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও না । আমি শুধু জানি যে লাবণী নামের একটা মেয়েকে আমার জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও । সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না , এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন পরে চলে যাবে ।
অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে , চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু জানাতে এসেছিলাম আমার মনের কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে । তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার আগ মুহূর্তেও বলব "লাবণী আমি তোমাকে ভালবাসি" , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী । এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার তো দেখা হয়েই যাবে ।
তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক । সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো ভালবাসে । এখনো লাবনীর রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে । এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে । অরন্য আমাকে বলল " গাধায় এটাও জানে না যে টাইটানিকের পোজে ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় " । আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ? একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে । জায়গাটা একটু বিপদজনক ।
লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আনলো । কাছে এনে লাবনীকে কোলে নিতে চাইলো । রোহিত ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো । তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন চলে গেলো রেলিঙের দিকে । লাবণী এখনও রোহিতের কোলে । রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো । নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে একেবারে নিচে পানিতে পড়ে গেলো । "রোহিত" , রোহিত" , বলে চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে পারছেনা । একবার ডুবছে আবার ভাসছে । এখনও লাবণী "রোহিত , রোহিত" বলে চিৎকার করছে । আর রোহিত চিৎকার করছে "কেউ লাবনীকে বাচাও , কেউ একজন বাচাও" । তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম । দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই এল "অরণ্য সাতারের কিছুই জানে না" ।
৭ দিন পর: অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায় থাকলে অপারেশনও করা যাবে না । যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক তখনই অপারেশন করা লাগবে ।
লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , " আমি একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? " । আমি কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি । রোহিতের সাথে থাকার সময় তো কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু , পবিত্র ।
লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী কথা বলা শুরু করল ।
অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা । তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , " লাবণী ভাল আছো ? "
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ "লাবনী , আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা রেখেছি লাবণী । আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি । লাবণী শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল থেকো " , বলে অরণ্য লাবণীর গালে আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল । লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই লাবণীকে ভালবাসে ।
তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায় গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম রুমে । " লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে আসলাম " , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।
লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল । গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে ! লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল । প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল " একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে ......... " । লাবনীর চোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো বেশি পরিমাণে । লাবনী ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন । লাবণী আজ কাঁদবে ।
লিখেছেন লাবণী
একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার হল , মুখ ফুটে "কোথায় যাও" ছাড়া আর কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে । অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা । কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই ভালবাসা বলে।
আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল । হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে হয় । মা - বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায় করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে যায় । সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায় চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি ই বলেছেন " প্রেম স্বর্গ থেকে আসে " ।
অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু তার ভালবাসার জন্য ।
লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে । হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন ভালবাসবি ? এই রকম "কেহ দেখিবে না মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না মোর অশ্রুবারিচয় " আর কত করবি ? গিয়ে বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?
অরন্যঃ "কিন্তু তানিয়া , ও যদি না করে তাহলে ?"
আমি বললাম (তানিয়া) "না করলে করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন রাখবি?"
অরন্যঃ "তর কথাও ঠিক । বলতে হবে আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই হ্যা করবে । "
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি , তানিয়া ।
" আমি তোমাকে ভালবাসি" , পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা । সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন । যত বেশি ভালবাস, তত বেশি হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয় দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে , হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।
লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই । অরণ্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে গেলো । হয়তো একেবারেই চলে গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য । আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে , সারাজীবন ।
তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে ভালবাসে তারমানে এই না যে অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে । লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।
অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে । যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের আলমারিতে মারলো । সরাসরি লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো । তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে আসল ।
লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায় ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?
অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই প্রেমে পড়ে যাই ।
লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি । তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ ।
লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই । প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার । যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই , ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু । তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে যেতে পারো ।
অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম থেকে আমি কি পাব তা কখনো চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও না । আমি শুধু জানি যে লাবণী নামের একটা মেয়েকে আমার জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও । সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না , এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন পরে চলে যাবে ।
অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে , চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু জানাতে এসেছিলাম আমার মনের কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে । তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার আগ মুহূর্তেও বলব "লাবণী আমি তোমাকে ভালবাসি" , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী । এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার তো দেখা হয়েই যাবে ।
তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক । সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো ভালবাসে । এখনো লাবনীর রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে । এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে । অরন্য আমাকে বলল " গাধায় এটাও জানে না যে টাইটানিকের পোজে ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় " । আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ? একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে । জায়গাটা একটু বিপদজনক ।
লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আনলো । কাছে এনে লাবনীকে কোলে নিতে চাইলো । রোহিত ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো । তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন চলে গেলো রেলিঙের দিকে । লাবণী এখনও রোহিতের কোলে । রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো । নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে একেবারে নিচে পানিতে পড়ে গেলো । "রোহিত" , রোহিত" , বলে চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে পারছেনা । একবার ডুবছে আবার ভাসছে । এখনও লাবণী "রোহিত , রোহিত" বলে চিৎকার করছে । আর রোহিত চিৎকার করছে "কেউ লাবনীকে বাচাও , কেউ একজন বাচাও" । তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম । দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই এল "অরণ্য সাতারের কিছুই জানে না" ।
৭ দিন পর: অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায় থাকলে অপারেশনও করা যাবে না । যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক তখনই অপারেশন করা লাগবে ।
লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , " আমি একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? " । আমি কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি । রোহিতের সাথে থাকার সময় তো কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু , পবিত্র ।
লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী কথা বলা শুরু করল ।
অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা । তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , " লাবণী ভাল আছো ? "
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ "লাবনী , আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা রেখেছি লাবণী । আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি । লাবণী শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল থেকো " , বলে অরণ্য লাবণীর গালে আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল । লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই লাবণীকে ভালবাসে ।
তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায় গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম রুমে । " লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে আসলাম " , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।
লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল । গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে ! লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল । প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল " একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে ......... " । লাবনীর চোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো বেশি পরিমাণে । লাবনী ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন । লাবণী আজ কাঁদবে ।
ভালোবাসার টানে
চৈত্রের দুপুর।প্রকাণ্ড শিরিষ গাছের ছায়া এসে পড়েছে টুসীদের বারান্দায়।সেই ছায়ার নিচে বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে একটা গল্প লেখার চেষ্টা চানিয়ে যাচ্ছে সে।দুটো লাইন লিখে;আবার কাটে।বিষয়টাযেন মনঃপুত হয় না তার।এখনো স্থির করতে পারছে না কিভাবে শুরু করবে।শুধু একটার পর একটা কাগজ নষ্ট করে যাচ্ছে।
‘আচ্ছা,ছাগলটাকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়?’মনে মনে ভাবছে সে।ওর কথা মনে পড়তেই মুখটা লাজে রাঙ্গা হয়ে ওঠে।
‘ছাগলটা কি আমার মনের কথা বোঝে না?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে?’এটা ভেবে পরক্ষ্ণণেই আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
‘ওর যা মাথা,কখনোই বুঝবে না!আচ্ছা,আমি ওকে কিভাবে বলব?ছাগল,আমি সারাজীবন তোর কাঁঠালপাতার স্পন্সর হতে চাই?হা হা হা!’ হাসতে থাকে টুসী।
ছাগলটার নাম অয়ন।টুসীর সাথেই পড়ে।এইচ।এস।সি। দিয়েছে দুজনে এবার।সেই পিচ্চিবেলা থেকে বন্ধুত্ব তাদের।একসাথে পড়েছে,খেলেছে,পা হাড় চষেছে।ক্লাসের পড়া আর খেলনা শেয়ার করতে করতে কখন যে মনের সব কথা শেয়ার করতে শুরু করেছে জানে না এদের কেউই।
সেই ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে নতুন প্রজাতির গাছ খুঁজে বের করা টুসীর নেশা।তাদের এলাকায় কোন গাছের কি নাম,কি তাদের গুন সব মুখস্থ বলে দিতে পারে সে।বনজংগলে একা একা ঘোরা মায়ের কঠোর নিষেধ।কিন্তু কে শোনে কার কথা!অয়ন যদি কখনো বলে, ‘আন্টি দেখে ফেললে?’ সে অকপটে উত্তর দেয়, ‘দেখলে দেখবে!আমি কি আর একা ঘুরছি নাকি?তোকে দেহরক্ষক রেখেছি কি করতে?’
অত্যন্ত খাঁটি কথা।সে তো আর একা যাচ্ছে না।আর কিছু বলতে পারে না অয়ন।মেয়েটির সব কথা সে মেনে নেয় চোখ বুজে।
এদের বন্ধুত্বটা কিভাবে হল সেটিও ভাববার বিষয়।দুজনসম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের।টুসী চঞ্চলমতি,অস্থির মনা।সারাক্ষণ শুধু পটর পটর করবে।আর সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়বে নতুন কোনো গাছের সন্ধানে।অপরদিকে অয়ন শান্তশিষ্ট,চুপচ াপ ধরনের।যত কম কথা বলতে পারে,ততই যেন তার শান্তি।হ্যাঁ,না বলে প্রশ্নের জবাব শেষ করতে পারলেই সে পালিয়ে বাঁচে।তার প্রধান কাজ হল টুসীর সাথে সাথে ঘোরা আর তার কথা মনযোগ দিয়ে শোনা।শুনতে হয় কারন টুসীর ধারনা যে তার কোনো কথাই শোনে না।তাই কথা বলতে বলতে হঠাত প্রশ্ন করে বসে, ‘এতক্ষণ কি বলেছি বল।’ঠিকমত জবাব দিতে না পারলে খুব রেগে যায় সে।একবার তো এক সপ্তাহ কথা বলেনি।তখন কি যেকষ্ট হয়েছিল!তাই সে টুসীর প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শোনে।
২
‘পাগলীটা এমন কেন?’ভাবছে অয়ন।‘সেদিন বলা নেই,কওয়া নেই হঠাত বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙ্গে।সেই সাথে তুমুল বজ্রপাত।এই সময়ে মেয়েটা কিনা ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠের দিকে ছুটে গেল।একটা মানুষ বৃষ্টি এত ভালোবাসতে পারে!নিজের কোনো খেয়াল নেই!যদি কিছু হয়ে যেত!’
৩
টুসী এখন গল্প লেখার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।তার অয়নের কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগছে।সেদিন মুভি দেখার সময় কি কাণ্ডটাই না হয়েছিল!সে চাইছিল অয়ন তার হাতটা ধরুক।কিন্তু গাধাটা এমন ফ্যালফ্যাল করে পর্দার দিকে তাকিয়ে ছিল!তখন টুসী ইচ্ছে করেই তার হাতটা অয়নের হাতের খুব কাছে রাখল।কিন্তু উনার খবর নাই!নিবিষ্টমনে মুভি দেখেই যাচ্ছেন!এত্ত রাগ হল!ইচ্ছে করছিল একটা একটা করে গাধাটার চুল ছিঁড়তে।হঠাত একটা হাতের স্পর্শ তার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বইয়ে দিয়ে গেল।অয়ন তার হাত ধরার চেষ্টা করছে।সে আড়চোখে দেখল বেচারা সংকোচ বোধ করছে।যদি টুসী রাগ করে!একটু ছুঁয়েই হাত সরিয়ে ফেলল অয়ন।
‘ধুর গাধা!আমি কি হাতটা সরিয়ে ফেলতাম নাকি!ছাগল একটা!’মনে মনে বলল টুসী।এরপর অয়নের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে তাকে।
‘স্যরি। এত্তবড় ভুল আমার কি করে হয়ে গেল আমি নিজেই জানি না।হঠাত করে তোর হাতটা আমার হাতে এসে লাগাতে আমার কেন জানি তোর হাতটা ধরতে ইচ্ছে করল।তুই রাগ করিস নি তো?’ভয় পাওয়া গলায় বলছিল অয়ন।
সেই মুহূরতে একটু রাগ দেখিয়েছিল টুসী।কিন্তু মনে মনে তো সে খুশিই হয়েছিল।
৪
অয়ন বুঝতে পারছে না কিভাবে সে তার মনের কথা বলবে।টুসীকে তার বেশ ভয় লাগে।ও যেরকম মেয়ে,কখনো কারো প্রেমে পড়বে বলে মনে হয় না।পাছে বন্ধুত্বটাই না নষ্ট হয়ে যায়।
আজ সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে তার।
৫
রাতে টুসী তার মা-বাবার সাথে খেতে বসেছে।বাবার মুখের দিকে তাকিয়েই সে চিমসে গেল।এত রেগে আছে কেন?এম্নিতেই বাবাকে বেশ ভয় পায় সে।এখন তো প্রাণটাইবের হয়ে হাতে চলে আসতে চাইছে।
খাবার টেবিলে কেউ কোনো কথা বলল না।রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় রাদিত সাহেব তার মেয়েকে ডাকলেন।
‘তোমাকে একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলার জন্য ডেকেছি।বস।’
‘জ্বী,আব্বু।’
‘তোমার ওই বন্ধুটার নাম কি যেন?সবসময় তোমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করে?’
‘অয়ন।’
‘ওর সাথে তোমার মেলামেশা আমার পছন্দ না।’
টুসী চুপ করে রইল।
‘রুনুর কথা মনে আছে?’
‘জ্বী।’
টুসীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল ওর ফুফাতো বোন রুনু।তার ভালোবাসার মানুষটিকে পরিবার মেনে নেয়নি দেখে গোপনে বিয়ে করে তারা।সেইদিন থেকে এই পরিবারের সাথে তার সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন বাবা।
‘যদি কখনো শুনি কোনো ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে তাহলে তোমাকে আমি ত্যাজ্য করব।এলাকায় তোমার বাবার একটা স্ট্যাটাস আছে।তোমার কারণে যেন সেটিতে কোনো দাগ না লাগে।মানুষ মুখিয়ে আছে এই পরিবারের সুনামে কলঙ্ক লেপে দিতে।তাই সবসময় সাবধানে থাকবে।’
টুসী মাথা নিচু করে সব শুনে গেল।
‘এখন যাও।’
রুমে এসে লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করল টুসী।একসাথে অনেকগুলো ভাবনা তার মাথায় চেপে বসেছে।কিছুক্ষণ এরকম থাকার পর একসময় মাথার ভেতরটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।এই সময় তার বোধ শক্তিও কাজ করছিলনা।অতীত বর্তমান ভবিষ্যত যেন এক মুহূর্তে লয় পেয়ে গিয়েছিল।কয়েক সেকেন্ড বাদেই তার বাঁ চোখ উপচে বন্ধ পাতার কোণ দিয়ে একটা অবাধ্য জলের ধারা গড়িয়ে গেল কানের দিকে।সে মোছার চেষ্টা করল না।
৬
আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।একটা জিনিস এত্ত সুন্দর,এত্ত সুন্দর কিভাবে হয়?ভূতের মত হা করে তাকিয়ে আছে অয়ন।সে ঠিক করেছে প্রতি কৃষ্ণপক্ষের রাতে টুসীর হাত ধরে চাঁদ দেখবে।জোতস্নাস্ নান করবে।আর টুসীর কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনবে।
ঘড়ি টিকটিক করে উঠল।আর মাত্র আধা ঘন্টা সময় হাতে আছে।ঠিক ১২টা বাজলেই টুসীকে ফোন করবে সে।বলে দেবে তার ভালোবাসার কথা।ঘুম ভেঙ্গে এসব শুনে মেয়েটা কি চমকানোটাই না চমকাবে।এই প্রথমবার অস্থির হতে দেখা যায় স্থিরমনা ছেলেটিকে।
৭
টুসী জেগেই ছিল।বালিশে মুখ গুঁজে আছে সে।একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যাবে সে কাদঁছে।নিশ্চুপে ।শুধু জল গড়িয়ে পরছে তার গাল বেয়ে।এমন সময় মোবাইলের ভাইব্রেশনটা বেজে উঠল।স্ক্রিন না দেখেই ফোনটা রিসিভ করল সে।
ওপাশ থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বেজে উঠল, ‘হ্যালো,টুসী?’
সে কোনো জবাব দেয় না।কন্ঠটা চিনতে অসুবিধে হয়না তার।
‘কি সুন্দর জোতস্না হয়েছে দেখেছিস?দাঁড়া একটা গান শুনাই তোকে। ’ওপাশের মানুষটি তাকে কথা বলার সুযোগ দেয় না।যেন আজ শুধু তারই কথা বলার দিন।
গিটার বাজিয়ে গান শুরু হয়...যখন নিঝুম রাতে...সবকিছু চুপ...নিষ্প্রাণ নগরীতে ঝিঁঝিঁরাও ঘুম...আমি চাঁদের আলো হয়ে...তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারা নিশি...এতটা ভালবাসি........ .টুসী,তোকে খুব ভালোবাসি রে।’
আবেগ জড়ানো কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হয় না তার।কিন্তু পুরো সময়টাতেই মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় না।কেউ যেনআঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে তার মুখটা।শুধু দুচোখ বেয়ে জল গড়ায়।ফোনটা কেটে দেয় টুসী।সে চায়না অয়ন তার কান্না শুনুক।
‘হ্যালো...টুসী. ..হ্যালো...ফোনট া কেটে দিল কেন?’ধাক্কা লাগে অয়নের বুকে।‘কিছু হয় নি তো আবার?নাকি ফোনটা অন্য কেউ ধরেছিল?’ টুসীর বাবার কথা মনে হতেই আতংকে জমে যায় সে।প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর ভয়ে বুকটা চিরে যেতে চায়।এত কষ্ট হচ্ছে কেন?লোনা পানির ধারা নারী-পুরুষ মানে না।
৮
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।এরই মধ্যে টুসী তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেছে।তার চোখফেটে জল নামছে।নামুক।প্র তিটা মেয়েই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চোখের পানি ফেলে।
বি.দ্র.-গল্পের উপসংহারটা আমি পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।ভাবুন না আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত!আশাবাদী হলে ধরে নিন সে সমাজের,পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে ভালোবাসার টানে ছুটে গেছে।আর আমার মত নিরাশাবাদী হলে সমাজের কাছে তাকে মাথা নুইয়ে ভালোবাসার কাছে হেরে যেতে দিন।
‘আচ্ছা,ছাগলটাকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়?’মনে মনে ভাবছে সে।ওর কথা মনে পড়তেই মুখটা লাজে রাঙ্গা হয়ে ওঠে।
‘ছাগলটা কি আমার মনের কথা বোঝে না?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে?’এটা ভেবে পরক্ষ্ণণেই আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
‘ওর যা মাথা,কখনোই বুঝবে না!আচ্ছা,আমি ওকে কিভাবে বলব?ছাগল,আমি সারাজীবন তোর কাঁঠালপাতার স্পন্সর হতে চাই?হা হা হা!’ হাসতে থাকে টুসী।
ছাগলটার নাম অয়ন।টুসীর সাথেই পড়ে।এইচ।এস।সি। দিয়েছে দুজনে এবার।সেই পিচ্চিবেলা থেকে বন্ধুত্ব তাদের।একসাথে পড়েছে,খেলেছে,পা হাড় চষেছে।ক্লাসের পড়া আর খেলনা শেয়ার করতে করতে কখন যে মনের সব কথা শেয়ার করতে শুরু করেছে জানে না এদের কেউই।
সেই ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে নতুন প্রজাতির গাছ খুঁজে বের করা টুসীর নেশা।তাদের এলাকায় কোন গাছের কি নাম,কি তাদের গুন সব মুখস্থ বলে দিতে পারে সে।বনজংগলে একা একা ঘোরা মায়ের কঠোর নিষেধ।কিন্তু কে শোনে কার কথা!অয়ন যদি কখনো বলে, ‘আন্টি দেখে ফেললে?’ সে অকপটে উত্তর দেয়, ‘দেখলে দেখবে!আমি কি আর একা ঘুরছি নাকি?তোকে দেহরক্ষক রেখেছি কি করতে?’
অত্যন্ত খাঁটি কথা।সে তো আর একা যাচ্ছে না।আর কিছু বলতে পারে না অয়ন।মেয়েটির সব কথা সে মেনে নেয় চোখ বুজে।
এদের বন্ধুত্বটা কিভাবে হল সেটিও ভাববার বিষয়।দুজনসম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের।টুসী চঞ্চলমতি,অস্থির মনা।সারাক্ষণ শুধু পটর পটর করবে।আর সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়বে নতুন কোনো গাছের সন্ধানে।অপরদিকে অয়ন শান্তশিষ্ট,চুপচ াপ ধরনের।যত কম কথা বলতে পারে,ততই যেন তার শান্তি।হ্যাঁ,না বলে প্রশ্নের জবাব শেষ করতে পারলেই সে পালিয়ে বাঁচে।তার প্রধান কাজ হল টুসীর সাথে সাথে ঘোরা আর তার কথা মনযোগ দিয়ে শোনা।শুনতে হয় কারন টুসীর ধারনা যে তার কোনো কথাই শোনে না।তাই কথা বলতে বলতে হঠাত প্রশ্ন করে বসে, ‘এতক্ষণ কি বলেছি বল।’ঠিকমত জবাব দিতে না পারলে খুব রেগে যায় সে।একবার তো এক সপ্তাহ কথা বলেনি।তখন কি যেকষ্ট হয়েছিল!তাই সে টুসীর প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শোনে।
২
‘পাগলীটা এমন কেন?’ভাবছে অয়ন।‘সেদিন বলা নেই,কওয়া নেই হঠাত বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙ্গে।সেই সাথে তুমুল বজ্রপাত।এই সময়ে মেয়েটা কিনা ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠের দিকে ছুটে গেল।একটা মানুষ বৃষ্টি এত ভালোবাসতে পারে!নিজের কোনো খেয়াল নেই!যদি কিছু হয়ে যেত!’
৩
টুসী এখন গল্প লেখার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।তার অয়নের কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগছে।সেদিন মুভি দেখার সময় কি কাণ্ডটাই না হয়েছিল!সে চাইছিল অয়ন তার হাতটা ধরুক।কিন্তু গাধাটা এমন ফ্যালফ্যাল করে পর্দার দিকে তাকিয়ে ছিল!তখন টুসী ইচ্ছে করেই তার হাতটা অয়নের হাতের খুব কাছে রাখল।কিন্তু উনার খবর নাই!নিবিষ্টমনে মুভি দেখেই যাচ্ছেন!এত্ত রাগ হল!ইচ্ছে করছিল একটা একটা করে গাধাটার চুল ছিঁড়তে।হঠাত একটা হাতের স্পর্শ তার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বইয়ে দিয়ে গেল।অয়ন তার হাত ধরার চেষ্টা করছে।সে আড়চোখে দেখল বেচারা সংকোচ বোধ করছে।যদি টুসী রাগ করে!একটু ছুঁয়েই হাত সরিয়ে ফেলল অয়ন।
‘ধুর গাধা!আমি কি হাতটা সরিয়ে ফেলতাম নাকি!ছাগল একটা!’মনে মনে বলল টুসী।এরপর অয়নের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে তাকে।
‘স্যরি। এত্তবড় ভুল আমার কি করে হয়ে গেল আমি নিজেই জানি না।হঠাত করে তোর হাতটা আমার হাতে এসে লাগাতে আমার কেন জানি তোর হাতটা ধরতে ইচ্ছে করল।তুই রাগ করিস নি তো?’ভয় পাওয়া গলায় বলছিল অয়ন।
সেই মুহূরতে একটু রাগ দেখিয়েছিল টুসী।কিন্তু মনে মনে তো সে খুশিই হয়েছিল।
৪
অয়ন বুঝতে পারছে না কিভাবে সে তার মনের কথা বলবে।টুসীকে তার বেশ ভয় লাগে।ও যেরকম মেয়ে,কখনো কারো প্রেমে পড়বে বলে মনে হয় না।পাছে বন্ধুত্বটাই না নষ্ট হয়ে যায়।
আজ সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে তার।
৫
রাতে টুসী তার মা-বাবার সাথে খেতে বসেছে।বাবার মুখের দিকে তাকিয়েই সে চিমসে গেল।এত রেগে আছে কেন?এম্নিতেই বাবাকে বেশ ভয় পায় সে।এখন তো প্রাণটাইবের হয়ে হাতে চলে আসতে চাইছে।
খাবার টেবিলে কেউ কোনো কথা বলল না।রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় রাদিত সাহেব তার মেয়েকে ডাকলেন।
‘তোমাকে একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলার জন্য ডেকেছি।বস।’
‘জ্বী,আব্বু।’
‘তোমার ওই বন্ধুটার নাম কি যেন?সবসময় তোমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করে?’
‘অয়ন।’
‘ওর সাথে তোমার মেলামেশা আমার পছন্দ না।’
টুসী চুপ করে রইল।
‘রুনুর কথা মনে আছে?’
‘জ্বী।’
টুসীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল ওর ফুফাতো বোন রুনু।তার ভালোবাসার মানুষটিকে পরিবার মেনে নেয়নি দেখে গোপনে বিয়ে করে তারা।সেইদিন থেকে এই পরিবারের সাথে তার সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন বাবা।
‘যদি কখনো শুনি কোনো ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে তাহলে তোমাকে আমি ত্যাজ্য করব।এলাকায় তোমার বাবার একটা স্ট্যাটাস আছে।তোমার কারণে যেন সেটিতে কোনো দাগ না লাগে।মানুষ মুখিয়ে আছে এই পরিবারের সুনামে কলঙ্ক লেপে দিতে।তাই সবসময় সাবধানে থাকবে।’
টুসী মাথা নিচু করে সব শুনে গেল।
‘এখন যাও।’
রুমে এসে লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করল টুসী।একসাথে অনেকগুলো ভাবনা তার মাথায় চেপে বসেছে।কিছুক্ষণ এরকম থাকার পর একসময় মাথার ভেতরটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।এই সময় তার বোধ শক্তিও কাজ করছিলনা।অতীত বর্তমান ভবিষ্যত যেন এক মুহূর্তে লয় পেয়ে গিয়েছিল।কয়েক সেকেন্ড বাদেই তার বাঁ চোখ উপচে বন্ধ পাতার কোণ দিয়ে একটা অবাধ্য জলের ধারা গড়িয়ে গেল কানের দিকে।সে মোছার চেষ্টা করল না।
৬
আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।একটা জিনিস এত্ত সুন্দর,এত্ত সুন্দর কিভাবে হয়?ভূতের মত হা করে তাকিয়ে আছে অয়ন।সে ঠিক করেছে প্রতি কৃষ্ণপক্ষের রাতে টুসীর হাত ধরে চাঁদ দেখবে।জোতস্নাস্ নান করবে।আর টুসীর কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনবে।
ঘড়ি টিকটিক করে উঠল।আর মাত্র আধা ঘন্টা সময় হাতে আছে।ঠিক ১২টা বাজলেই টুসীকে ফোন করবে সে।বলে দেবে তার ভালোবাসার কথা।ঘুম ভেঙ্গে এসব শুনে মেয়েটা কি চমকানোটাই না চমকাবে।এই প্রথমবার অস্থির হতে দেখা যায় স্থিরমনা ছেলেটিকে।
৭
টুসী জেগেই ছিল।বালিশে মুখ গুঁজে আছে সে।একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যাবে সে কাদঁছে।নিশ্চুপে ।শুধু জল গড়িয়ে পরছে তার গাল বেয়ে।এমন সময় মোবাইলের ভাইব্রেশনটা বেজে উঠল।স্ক্রিন না দেখেই ফোনটা রিসিভ করল সে।
ওপাশ থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বেজে উঠল, ‘হ্যালো,টুসী?’
সে কোনো জবাব দেয় না।কন্ঠটা চিনতে অসুবিধে হয়না তার।
‘কি সুন্দর জোতস্না হয়েছে দেখেছিস?দাঁড়া একটা গান শুনাই তোকে। ’ওপাশের মানুষটি তাকে কথা বলার সুযোগ দেয় না।যেন আজ শুধু তারই কথা বলার দিন।
গিটার বাজিয়ে গান শুরু হয়...যখন নিঝুম রাতে...সবকিছু চুপ...নিষ্প্রাণ নগরীতে ঝিঁঝিঁরাও ঘুম...আমি চাঁদের আলো হয়ে...তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারা নিশি...এতটা ভালবাসি........ .টুসী,তোকে খুব ভালোবাসি রে।’
আবেগ জড়ানো কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হয় না তার।কিন্তু পুরো সময়টাতেই মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় না।কেউ যেনআঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে তার মুখটা।শুধু দুচোখ বেয়ে জল গড়ায়।ফোনটা কেটে দেয় টুসী।সে চায়না অয়ন তার কান্না শুনুক।
‘হ্যালো...টুসী. ..হ্যালো...ফোনট া কেটে দিল কেন?’ধাক্কা লাগে অয়নের বুকে।‘কিছু হয় নি তো আবার?নাকি ফোনটা অন্য কেউ ধরেছিল?’ টুসীর বাবার কথা মনে হতেই আতংকে জমে যায় সে।প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর ভয়ে বুকটা চিরে যেতে চায়।এত কষ্ট হচ্ছে কেন?লোনা পানির ধারা নারী-পুরুষ মানে না।
৮
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।এরই মধ্যে টুসী তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেছে।তার চোখফেটে জল নামছে।নামুক।প্র তিটা মেয়েই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চোখের পানি ফেলে।
বি.দ্র.-গল্পের উপসংহারটা আমি পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।ভাবুন না আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত!আশাবাদী হলে ধরে নিন সে সমাজের,পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে ভালোবাসার টানে ছুটে গেছে।আর আমার মত নিরাশাবাদী হলে সমাজের কাছে তাকে মাথা নুইয়ে ভালোবাসার কাছে হেরে যেতে দিন।
এক অন্যরকম অনুভুতিঃ
একটু সময় নিয়ে গল্পটা পড়ে দেখুন মন ভালো হয়ে যাবে :)সবাইকে বলতাম অল্প সময়ে কাওকে বিয়ে করা উচিৎ না । বিয়ের আগে অন্তত এক দুই মাস একে অপরের সম্পর্কে জেনে তারপর বিয়ে করা উচিৎ । আর সেই আমিই কিনা এক সপ্তাহের
পরিচয়ে ওকে বিয়ে করে ফেল্লাম !কি আর করবো, মা যখন ওর ছবিটা দেখাল শুধু এতোটুকুই
মনে হচ্ছিলো এতদিন তো একেই খুজছিলাম ! ওদের বাসায় ওকে যেদিন দেখতে গেলাম ওইদিন ও বেশি কথা বলেনি । যেটুকু বলল তাতেই বুঝে গেলাম এরকম সুন্দর গলার আওয়াজ খুব কম জনেরি থাকে ।
আমাকে বিয়ে করতে ও রাজি কিনা জিজ্ঞেস করলে ও বলেছিল রাজি । ওর বাবা অসুস্থ তাই ৭ দিন পরেই বিয়ে ঠিক হল । ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে থাকলেও
বেশি কথা বলা হয়নি । বিয়েটা হয়েই গেলো । বাসর রাত নাকি সবার জীবনেই আনন্দের । ও আমার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে । বুজতেছিলাম না কি বলে কথা শুরু করবো । একটু পরে যেই কথা বলতে যাবো খেয়াল করলাম ও কাঁদছে । অনেক
জিজ্ঞেস করার পরও ও কিছু বলল না । জিজ্ঞেস করলাম বাসার জন্য মন খারাপ ? এরপর ও যা বলল টার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । ও বলল "আমি আপনাকে কখনই মন থেকে ভালবাসতে পারবোনা । আমি একজনকে ভালবাসতাম । ওই ছিল আমার প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসা । কিন্তু যেদিন ও
আমাকে নোংরা একটা প্রস্তাব দিলো সেদিনি ওর প্রতি আমার সব ভালবাসা শেষ হয়ে গেছে । ও আমাকে সত্যিকারে ভালবাসতে না পারলেও আমি ওকে সত্যিকারে ভালবেসেছিলাম। আপনাকে এইমুহূর্তে বিয়ে না করলে বাবার অবস্থা আরও খারাপ হত । তাই আপনাকে বিয়ে করা । বিয়ের আগে আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি । আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আর প্লিজ আমাকে যোর করে স্পর্শ
করেন না । " ওর কথা শুনে মনে মনে বললাম দুনিয়াতে এত ছেলে থাকতে আমার কপালেই কেন এরকম ছিল ! ওকে কথা দিলাম ও যে পর্যন্ত আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারবেনা সেই পর্যন্ত ওকে আমি স্পর্শ করবনা । ওর বাম গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম ওর পাশে সবসময় আছি । ওর কাছে একটাই অনুরোদ করল্লাম বাসার কেও যাতে এসব কিছু না বুজতে পারে । পরদিন যখন ঘুম ভাংলো দেখলাম ও বিছানায় নেই । পরে দেখলাম মার সাথে নাস্তা বানাচ্ছে । যাক বাসার সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছে দেখে ভালো লাগল । সবার সামনে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন ও
আমাকে কত ভালবাসে ! তাওতো ভালো বাসার কেও বুজবেনা । এমনি ভাবেই দিন কাটতে লাগল । আমার কোন পছন্দের কাপর ওকে পরতে বললে ও পরতো, আমার পছন্দের কাজ গুলো ও করত ঠিকি তবে মন থেকে না ।ওর নাম টাই তো তোমাদের বলা হলনা । ওর নাম মিলি ।মাঝে মাঝে মনে হত ও কি কোনদিনই আমার ভালবাসা বুজবেনা ! অফিস এ গেলে ও কোনদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করতনা দুপুরে খাইছি কিনা । আমিই সবসময় ফোন করে জিজ্ঞেস করতাম ও খাইছে কিনা । ফোন রাখার পর ও মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করত আমি খাইছি কিনা । বাসায় টিভি দেখার সময় ও কখনো আমি যেই সোফাতে বসা থাকি সেখানে বসে না । তখন মনে হত ওর ভালবাসা আমার আর পাওয়া হবেনা । আমি যে ওকে কত ভালবাসি এটা কি ও বুঝেনা ? আমরা এক বিছানায় ঘুমালেও মাঝে থাকে কোলবালিশ । তখন মনে হয় কোন দুঃখে যে এত বড় কোলবালিশ বানাইতে গেছিলাম !
ঘুমালে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম ও আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর মাঝের কোলবালিশটাও নাই । তখন কি যে ভালো লাগে যদিও ও অবচেতন মনে আমাকে ধরে আছে । আমিও ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতাম । কখন যে সকাল হত টেরি পেতাম না । আচ্ছা ও ঘুমালে যে আমি ওর কপালে চুমু দেই এটা কি ও বুজতে পারে নাকি পারেনা ? জানিনা । অফিস এ যাওয়ার সময় ও চা দিয়ে যায় । আগে ওকে এক চুমুক খেতে বলি তারপর আমি খাই । ও জিজ্ঞেস করে এতে আমি কি মজা পাই । তখন আমি বলি যাকে ভালোবাসো টার টা খেয়ে দেখো আমি কি মজা পাই ও কিছু বলেনা । এক সকালে দেখলাম ও মন খারাপ করে বসে আছে । কি করা যায় কিছু বুজতে না পেরে ওকে নিয়ে বেরাতে বের হলাম । বেরাতে বেরাতে যখন ওদের বাসার সামনে আসলাম তা দেখে ও যে কি খুশি হোল । ওর খুশি দেখে আমারো খুব ভালো লাগল । সারাদিন
ওখানে ছিল । রাতে বাসায় আসার পর শুধু এতটুকু বলল " থাঙ্কস " !!! একদিন দেখলাম ও কেমন করে যেন হাঁটছে । বোঝাযাচ্ছিল পায়ে কিছু
একটা হইছে । জিজ্ঞেস করলে ও বলল কিছুনা । আমিই জোর করে দেখতে চাইলাম ।দেখলাম ওর পা কেটে গেছে ।বলল চেয়ারের সাথে লেগে কেটে গেছে ।ওসুদ লাগাইছেকিনা জিজ্ঞেস করলে বলল ও ছোট বেলা থেকেই নাকি কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে ভয় পায় । ওর নাকি জলাটা সহ্য হয়না ।
তখন আমিই ওকে বিছানায় বসালাম । কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে যাবো ও বলল ওর সহ্য হবেনা । আমি বললাম আমার এক হাত শক্ত করে ধরো বেথা পাবানা । ওসুদ লাগানোর সময় ও আরও শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিল । দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি ওর যেন কি হইছে । আমার পছন্দের কাপর গুলো পরছে যদিও আমি পরতে বলিনাই । আজ যখন চা অর্ধেক খেয়ে টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় গেলাম তখন দরজার ফাক দিয়ে দেখলাম ও আমার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে । কিছু বুঝলাম না, শুধু দেখলাম ও একটু
মুচকি হাসছে ! হটাত দুপুরে ও ফোন দিলো ! ভাবলাম বাসায় মনে হয় কিছু হইছে । বলল আমি নাকি বাসায় রুমাল ফেলে আসছি । এরপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করছে খাইছিকিনা । আমিতো প্রায়ই বাসায় রুমাল ফেলে আসি কই কোনদিনতো ও ফোন দিলনা ! বুঝলাম রুমাল আসলে ছুতা । তাইলে কি ও আমাকে ভালবাসতে শুরু করছে ! ? জানিনা । বাসায় এসে দেখলাম ও খুব হাসি খুশি । বুঝলাম মনটা খুব ভালো । রাতে সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম ও এসে জিজ্ঞেস করলো চা খাবকিনা ? বললাম খাব । চা নিয়ে এসে ও ঠিক আমি যেই সোফায় বসেছিলাম তাতে এসে বসলো । চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম সব সোফা ঠিক আছেত না আমি ভুল দেখতেছি ! সবতো ঠিকি আছে, তাইলে ওর আজ কি হলো ! কিছুই বুজতেছিনা । রাতে ও আমার আগেই শুয়ে পরছিল । আমি যখন শুতে গেলাম দেখি বিছানায় কোলবালিশ নাই । এতবড় কোলবালিশটা গেলো কই ! আমিও শুয়ে পরলাম ।
আমি শোবার একটু পর ও আমার দিক ফিরে শুইল । বুঝলাম ও ঘুমাইনাই । আমিও ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম । একটু পর ও আমার হাতের উপর হাত রাখল । জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে ? কিছু বলল না । আবারো জিজ্ঞেস করলাম । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে । ওকে কাছে টেনে নিলাম । জিজ্ঞেস করলাম মন খারাপ ? ও বলল না । তাহলে ? :সরি । :কেনো ? :তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি । তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারলানা ?
:ভালবাসিতো ।
:আর বাসবানা ।
:আচ্ছা বাসবনা ।
এরপর ও আমাকে শক্ত
করে জরিয়ে ধরে বলল
" I Love You "
পরিচয়ে ওকে বিয়ে করে ফেল্লাম !কি আর করবো, মা যখন ওর ছবিটা দেখাল শুধু এতোটুকুই
মনে হচ্ছিলো এতদিন তো একেই খুজছিলাম ! ওদের বাসায় ওকে যেদিন দেখতে গেলাম ওইদিন ও বেশি কথা বলেনি । যেটুকু বলল তাতেই বুঝে গেলাম এরকম সুন্দর গলার আওয়াজ খুব কম জনেরি থাকে ।
আমাকে বিয়ে করতে ও রাজি কিনা জিজ্ঞেস করলে ও বলেছিল রাজি । ওর বাবা অসুস্থ তাই ৭ দিন পরেই বিয়ে ঠিক হল । ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে থাকলেও
বেশি কথা বলা হয়নি । বিয়েটা হয়েই গেলো । বাসর রাত নাকি সবার জীবনেই আনন্দের । ও আমার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে । বুজতেছিলাম না কি বলে কথা শুরু করবো । একটু পরে যেই কথা বলতে যাবো খেয়াল করলাম ও কাঁদছে । অনেক
জিজ্ঞেস করার পরও ও কিছু বলল না । জিজ্ঞেস করলাম বাসার জন্য মন খারাপ ? এরপর ও যা বলল টার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । ও বলল "আমি আপনাকে কখনই মন থেকে ভালবাসতে পারবোনা । আমি একজনকে ভালবাসতাম । ওই ছিল আমার প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসা । কিন্তু যেদিন ও
আমাকে নোংরা একটা প্রস্তাব দিলো সেদিনি ওর প্রতি আমার সব ভালবাসা শেষ হয়ে গেছে । ও আমাকে সত্যিকারে ভালবাসতে না পারলেও আমি ওকে সত্যিকারে ভালবেসেছিলাম। আপনাকে এইমুহূর্তে বিয়ে না করলে বাবার অবস্থা আরও খারাপ হত । তাই আপনাকে বিয়ে করা । বিয়ের আগে আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি । আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আর প্লিজ আমাকে যোর করে স্পর্শ
করেন না । " ওর কথা শুনে মনে মনে বললাম দুনিয়াতে এত ছেলে থাকতে আমার কপালেই কেন এরকম ছিল ! ওকে কথা দিলাম ও যে পর্যন্ত আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারবেনা সেই পর্যন্ত ওকে আমি স্পর্শ করবনা । ওর বাম গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম ওর পাশে সবসময় আছি । ওর কাছে একটাই অনুরোদ করল্লাম বাসার কেও যাতে এসব কিছু না বুজতে পারে । পরদিন যখন ঘুম ভাংলো দেখলাম ও বিছানায় নেই । পরে দেখলাম মার সাথে নাস্তা বানাচ্ছে । যাক বাসার সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছে দেখে ভালো লাগল । সবার সামনে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন ও
আমাকে কত ভালবাসে ! তাওতো ভালো বাসার কেও বুজবেনা । এমনি ভাবেই দিন কাটতে লাগল । আমার কোন পছন্দের কাপর ওকে পরতে বললে ও পরতো, আমার পছন্দের কাজ গুলো ও করত ঠিকি তবে মন থেকে না ।ওর নাম টাই তো তোমাদের বলা হলনা । ওর নাম মিলি ।মাঝে মাঝে মনে হত ও কি কোনদিনই আমার ভালবাসা বুজবেনা ! অফিস এ গেলে ও কোনদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করতনা দুপুরে খাইছি কিনা । আমিই সবসময় ফোন করে জিজ্ঞেস করতাম ও খাইছে কিনা । ফোন রাখার পর ও মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করত আমি খাইছি কিনা । বাসায় টিভি দেখার সময় ও কখনো আমি যেই সোফাতে বসা থাকি সেখানে বসে না । তখন মনে হত ওর ভালবাসা আমার আর পাওয়া হবেনা । আমি যে ওকে কত ভালবাসি এটা কি ও বুঝেনা ? আমরা এক বিছানায় ঘুমালেও মাঝে থাকে কোলবালিশ । তখন মনে হয় কোন দুঃখে যে এত বড় কোলবালিশ বানাইতে গেছিলাম !
ঘুমালে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম ও আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর মাঝের কোলবালিশটাও নাই । তখন কি যে ভালো লাগে যদিও ও অবচেতন মনে আমাকে ধরে আছে । আমিও ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতাম । কখন যে সকাল হত টেরি পেতাম না । আচ্ছা ও ঘুমালে যে আমি ওর কপালে চুমু দেই এটা কি ও বুজতে পারে নাকি পারেনা ? জানিনা । অফিস এ যাওয়ার সময় ও চা দিয়ে যায় । আগে ওকে এক চুমুক খেতে বলি তারপর আমি খাই । ও জিজ্ঞেস করে এতে আমি কি মজা পাই । তখন আমি বলি যাকে ভালোবাসো টার টা খেয়ে দেখো আমি কি মজা পাই ও কিছু বলেনা । এক সকালে দেখলাম ও মন খারাপ করে বসে আছে । কি করা যায় কিছু বুজতে না পেরে ওকে নিয়ে বেরাতে বের হলাম । বেরাতে বেরাতে যখন ওদের বাসার সামনে আসলাম তা দেখে ও যে কি খুশি হোল । ওর খুশি দেখে আমারো খুব ভালো লাগল । সারাদিন
ওখানে ছিল । রাতে বাসায় আসার পর শুধু এতটুকু বলল " থাঙ্কস " !!! একদিন দেখলাম ও কেমন করে যেন হাঁটছে । বোঝাযাচ্ছিল পায়ে কিছু
একটা হইছে । জিজ্ঞেস করলে ও বলল কিছুনা । আমিই জোর করে দেখতে চাইলাম ।দেখলাম ওর পা কেটে গেছে ।বলল চেয়ারের সাথে লেগে কেটে গেছে ।ওসুদ লাগাইছেকিনা জিজ্ঞেস করলে বলল ও ছোট বেলা থেকেই নাকি কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে ভয় পায় । ওর নাকি জলাটা সহ্য হয়না ।
তখন আমিই ওকে বিছানায় বসালাম । কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে যাবো ও বলল ওর সহ্য হবেনা । আমি বললাম আমার এক হাত শক্ত করে ধরো বেথা পাবানা । ওসুদ লাগানোর সময় ও আরও শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিল । দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি ওর যেন কি হইছে । আমার পছন্দের কাপর গুলো পরছে যদিও আমি পরতে বলিনাই । আজ যখন চা অর্ধেক খেয়ে টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় গেলাম তখন দরজার ফাক দিয়ে দেখলাম ও আমার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে । কিছু বুঝলাম না, শুধু দেখলাম ও একটু
মুচকি হাসছে ! হটাত দুপুরে ও ফোন দিলো ! ভাবলাম বাসায় মনে হয় কিছু হইছে । বলল আমি নাকি বাসায় রুমাল ফেলে আসছি । এরপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করছে খাইছিকিনা । আমিতো প্রায়ই বাসায় রুমাল ফেলে আসি কই কোনদিনতো ও ফোন দিলনা ! বুঝলাম রুমাল আসলে ছুতা । তাইলে কি ও আমাকে ভালবাসতে শুরু করছে ! ? জানিনা । বাসায় এসে দেখলাম ও খুব হাসি খুশি । বুঝলাম মনটা খুব ভালো । রাতে সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম ও এসে জিজ্ঞেস করলো চা খাবকিনা ? বললাম খাব । চা নিয়ে এসে ও ঠিক আমি যেই সোফায় বসেছিলাম তাতে এসে বসলো । চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম সব সোফা ঠিক আছেত না আমি ভুল দেখতেছি ! সবতো ঠিকি আছে, তাইলে ওর আজ কি হলো ! কিছুই বুজতেছিনা । রাতে ও আমার আগেই শুয়ে পরছিল । আমি যখন শুতে গেলাম দেখি বিছানায় কোলবালিশ নাই । এতবড় কোলবালিশটা গেলো কই ! আমিও শুয়ে পরলাম ।
আমি শোবার একটু পর ও আমার দিক ফিরে শুইল । বুঝলাম ও ঘুমাইনাই । আমিও ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম । একটু পর ও আমার হাতের উপর হাত রাখল । জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে ? কিছু বলল না । আবারো জিজ্ঞেস করলাম । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে । ওকে কাছে টেনে নিলাম । জিজ্ঞেস করলাম মন খারাপ ? ও বলল না । তাহলে ? :সরি । :কেনো ? :তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি । তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারলানা ?
:ভালবাসিতো ।
:আর বাসবানা ।
:আচ্ছা বাসবনা ।
এরপর ও আমাকে শক্ত
করে জরিয়ে ধরে বলল
" I Love You "
সেই মেয়েটি আজো তুমি:
মেয়েঃ আমি তোমাকে অসম্ভব মিস করেছি।
ছেলেঃ হ্যা, তো ?
মেয়েঃ সত্যি আমি তোমাকে অনেক কাছে পেতে চেয়েছি।
ছেলেঃ ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম।
মেয়েঃ আমাকে “ক্ষমা” করে দাও
ছেলেঃ কেনো ???
মেয়েঃ তুমি আমার সাথে যোগাযোগ এর জন্য যতচেষ্টা করেছো সব ইগনোর করার জন্য।
ছেলেঃ ওহ!! ব্যাপার না। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো , তার পর একসময় আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তার পর আমি চেষ্টা ছেড়ে ভুলা শুরু করেছিলাম।
মেয়েঃ আমি ও তোমাকে ভুলতে চেয়েছি কিন্তু তোমার কথা শুধুই আমার মনে পরতো। আর...
ছেলেঃ ......
মেয়েঃ আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমি তোমাকে আরপাবো না, কারন ছয় বছর পার হয়ে গিয়েছিলো।
ছেলেঃ ঠিক আছে।
মেয়েঃ কিভাবে ঠিক আছে ? আমি কিছুই ঠিক দেখতে পাচ্ছিনা।
ছেলেঃ আমি ভাবতাম তুমি ফিরে আসবে । কিন্তু তুমি ছয় বছরে ও আসোনি। তার পর প্রকৃতি আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছে। আর আমি ও আশা ছেড়ে এগিয়ে চলেছি।
মেয়েঃ মানে ? আমি কি খুব দেরি করেছি ??
ছেলেঃ কিসের জন্য দেরি করেছো ?
মেয়েঃ তোমার কাছে ফিরে আসার জন্য ??
ছেলেঃ :) জানো এই কথাটা আরো ২ বছর আগেও আমি শুনতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে। কিন্তু এটা শুধুই ইচ্ছা হিসেবে রয়েগিয়েছে। তার পর আমি অনুভব করেছি ইহা সম্ভব নয়। তার পর আমি আশা করা ছেড়ে দিয়েছি।
মেয়েঃ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, এইবার আমি তোমার সব স্বপ্ন পূর্ন করবো।
ছেলেঃ এটা আর কখনোই সম্ভব নয়। আমার জীবনে কেউ একজন চলে এসেছে ২বছর আগে।
মেয়েঃ তোমার জন্য এটা ভালো হয়েছে, কে সে ? আমি কি তার সাথে দেখা করতে পারি ?
ছেলেঃ সে তোমার সাথে কখনোই দেখা করবে না।
মেয়েঃ কেনো ????
ছেলেঃ (ধীরে ধীরে বলছে) সে এমন কারো সাথে দেখা করতে চায় না যে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তোমার কাছে এইবার আমি “ক্ষমা” চাই । তুমি একবার আমার হৃদয় ভেঙ্গেছো। আমি আবার সেই ঝুকি নিতে পারবো না। যাই হোক ৬টি বছর নিরব থাকার পর আমারসাথে কথা বলতে আসার জন্য ধন্যবাদ তোমায়। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলেগেলো (মেয়েটি চলে যাবার পর) ছেলেটি তার মানিব্যাগ বের করলো আর সেখান থেকে মেয়েটির ছবি বের করলো। কয়েকফোটা জল তার চোখ থেকে বেয়ে বুকের উপর পড়লো। আর সে বলল “সেই মেয়েটি আজো তুমি”
ছেলেঃ হ্যা, তো ?
মেয়েঃ সত্যি আমি তোমাকে অনেক কাছে পেতে চেয়েছি।
ছেলেঃ ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম।
মেয়েঃ আমাকে “ক্ষমা” করে দাও
ছেলেঃ কেনো ???
মেয়েঃ তুমি আমার সাথে যোগাযোগ এর জন্য যতচেষ্টা করেছো সব ইগনোর করার জন্য।
ছেলেঃ ওহ!! ব্যাপার না। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো , তার পর একসময় আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তার পর আমি চেষ্টা ছেড়ে ভুলা শুরু করেছিলাম।
মেয়েঃ আমি ও তোমাকে ভুলতে চেয়েছি কিন্তু তোমার কথা শুধুই আমার মনে পরতো। আর...
ছেলেঃ ......
মেয়েঃ আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমি তোমাকে আরপাবো না, কারন ছয় বছর পার হয়ে গিয়েছিলো।
ছেলেঃ ঠিক আছে।
মেয়েঃ কিভাবে ঠিক আছে ? আমি কিছুই ঠিক দেখতে পাচ্ছিনা।
ছেলেঃ আমি ভাবতাম তুমি ফিরে আসবে । কিন্তু তুমি ছয় বছরে ও আসোনি। তার পর প্রকৃতি আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছে। আর আমি ও আশা ছেড়ে এগিয়ে চলেছি।
মেয়েঃ মানে ? আমি কি খুব দেরি করেছি ??
ছেলেঃ কিসের জন্য দেরি করেছো ?
মেয়েঃ তোমার কাছে ফিরে আসার জন্য ??
ছেলেঃ :) জানো এই কথাটা আরো ২ বছর আগেও আমি শুনতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে। কিন্তু এটা শুধুই ইচ্ছা হিসেবে রয়েগিয়েছে। তার পর আমি অনুভব করেছি ইহা সম্ভব নয়। তার পর আমি আশা করা ছেড়ে দিয়েছি।
মেয়েঃ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, এইবার আমি তোমার সব স্বপ্ন পূর্ন করবো।
ছেলেঃ এটা আর কখনোই সম্ভব নয়। আমার জীবনে কেউ একজন চলে এসেছে ২বছর আগে।
মেয়েঃ তোমার জন্য এটা ভালো হয়েছে, কে সে ? আমি কি তার সাথে দেখা করতে পারি ?
ছেলেঃ সে তোমার সাথে কখনোই দেখা করবে না।
মেয়েঃ কেনো ????
ছেলেঃ (ধীরে ধীরে বলছে) সে এমন কারো সাথে দেখা করতে চায় না যে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তোমার কাছে এইবার আমি “ক্ষমা” চাই । তুমি একবার আমার হৃদয় ভেঙ্গেছো। আমি আবার সেই ঝুকি নিতে পারবো না। যাই হোক ৬টি বছর নিরব থাকার পর আমারসাথে কথা বলতে আসার জন্য ধন্যবাদ তোমায়। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলেগেলো (মেয়েটি চলে যাবার পর) ছেলেটি তার মানিব্যাগ বের করলো আর সেখান থেকে মেয়েটির ছবি বের করলো। কয়েকফোটা জল তার চোখ থেকে বেয়ে বুকের উপর পড়লো। আর সে বলল “সেই মেয়েটি আজো তুমি”
অমায়িক ভালবাসা
প্রতিদিনের মত আজও ছেলেটি এপ্রন হাতে বাস- স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে বাস এর জন্য ওয়েট করছে।লিজা আজও তাকে দেখল।সে মেডিকেল এর স্টুডেন্টদেরকে দুই চোখে দেখতে পারেনা।কেননা, সে নিজে মেডিকেল এ চান্স পায়নি।কিন্তু এই ছেলেটাকে একটু অন্য রকম লাগে তার।অন্যান্য মেডিকেল এর স্টুডেন্টদের কে দেখলে তার মাঝে যেমন বিরক্তি আসে এই ছেলেটিকে দেখলে তেমন বিরক্তি আসে না।বরং এই ছেলেটিকে দেখার জন্যই লিজা প্রতিদিন একই বাস স্ট্যান্ড এ আসে।অন্য কোন পথ দিয়ে যাতায়াত না করে এই পথ দিয়েই আসে সে।লিজা মেয়েটা একটু অন্যরকম ছিল।অন্যরকম বলতে, সে এমন ভাব করে যেন প্রেম-ভালবাসার ধারে কাছে সে নেই।কিন্তু মনে মনে সে এক ধাপ এগিয়ে।বাস স্ট্যান্ড এর ওই ছেলেটার নাম ছিল রনি।রনিও লিজা কে চুপচাপ লক্ষ করত।মাঝে মাঝেই তাদের একে অপরের সাথে চোখাচোখি হত।বাস এ রনি যখন দেখত লিজা দাড়িয়ে আছে আর সে বসে আছে তখন নিজের সিটটাও ছেড়ে দিত।কিন্তু তারা কখনও একে অপরের সাথে কথা বলেনি।এমনকি তারা একে অপরের নামটাও জানতোনা।লিজা প্রতিদিনই হাজারও বুদ্ধি বের করত রনির সাথে কথা বলার কিন্তু কাজের সময় আর বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারতোনা।প্রতিদিনের মত আজও লিজা চিন্তা করতে লাগল ব্যাপারটি নিয়ে।যেহেতু লিজা একটুচাপা স্বভাবের , তাই সে এই ব্যাপারে কারও কাছে পরামর্শও চায়নি।দুদিন বাদেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী।সে ঠিক করল ওই দিনই ছেলেটিকে সব বলবে ও।যেই লিজা জীবনে কখনও ফুল কেনেনি, সে-ই ১৪ই ফেব্রুয়ারী সকালে নিজে ফুল কিনতে গেল।নিজের পছন্দের ফুল হাতে নিয়ে সে বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছে ছেলেটির অপেক্ষায়...বেশিরভাগ সময় বাস স্ট্যান্ড এ ছেলেটিকেই আগে আসতে দেখা যেত।আগে দেখা না গেলেও ১০-২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসত।কিন্তু আজ ৪০ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরেও ছেলেটির কোন খবর নেই।আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল লিজা কিন্তু এর পরেও ছেলেটির কোন দেখা নেই।নিজেকে খুব বোকা মনে হল লিজার।মনে মনে ভাবল..."ছেলেটির হয়তো প্রেমিকা আছে। না, হয়তো কেন হবে।অবশ্যই আছে মেডিকেল এ পড়ে, দুই দিন বাদে ডাক্তার হবে।দেখতেও তো খারাপ নয়।প্রেমিকা থাকবেনা কেন??১৪ই ফেব্রুয়ারীতে প্রেমিকাকে ছেড়ে সে এই বাস স্ট্যান্ড এইবা আসবে কেন???"ওই দিন লিজা চলে গেল। ঠিক করল আর কোন দিন ওই বাস স্ট্যান্ড এই যাবেনা না সে আর যায়নি... গেলেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে।তবে যখনই সে ওই বাস স্ট্যান্ড পার হয়েছে তখনই বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেছে।কিন্তু রনি কে দেখেনি.কিছুদিন পর লিজার বিয়ে ঠিক হল।বিয়েটি ঠিক করল লিজার মা।লিজা কোন আপত্তি করে নি।যদিও সে রনি কে ভুলতে পারেনি।বিয়ের পর কিছুদিন ভালই কাটল।তারপর একদিন লিজা তার বরের ঘরে একটি ছবি খুজে পেল।ছবিতি দেখে আঁতকে উঠল লিজা।এটি সেই ছেলের ছবি।লিজা তার বরের কাছে জানতে চায়..."ছেলেটি কে?? "জবাবে তিনি জানান.."ছেলেটির নাম রনি।মেডিকেল এ পড়ত।।বছর ২ আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারী তে সে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।মারা যাওয়ার সময় তার হাতে ফুল ছিল আর ছিল একটি চিঠি..তার সাথে নাকি প্রতিদিন এক মেয়ের দেখা হত বাস স্ট্যান্ড এ।সে তাকে Propose করার জন্যই ওই দিন বাস স্ট্যান্ড এ যাচ্ছিল।দুঃখের বিষয় সে মেয়েটির নাম বলতে পারেনি।কোন ঠিকানাও দিতে পারেনি...সবটা পড়ার পর আপনার অনুভূতি জানাবেন না জানালে মনে করব আমার হাতের লেখা খুব খারাপ তাই সব পড়েন নি।দুঃখ টা নিজের বুকেই চেপে রাখবো।
Facebook e love......
একটি ছেলে যার ছিল অনেক স্বপ্ন। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে। এই কারনে তার ফেসবুক এ আইডি খোলা। তার নাম ছিল রাফা। সে স্কুল-এ খুব চুপচাপ থাকতো। স্কুলে ছিল তার অনেক বন্ধু। কিন্তু সবাই ছিল ছেলে। কোন মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়নি। ফেসবুক আইডি খুলেছে সে ২০০৯ সালে। তখন সে প্রতিদিন এ সাইবার ক্যাফ-এ গিয়ে ফেসবুক ব্যভার করতো। সে কখনো ভাবে নি যে তার আজ এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে। তখন তার ফেসবুক আইডি তে ও কোন মেয়ে বন্ধু ছিল না। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যায় সে। জানতে পারে যে তার মামাতো ভাইয়ের ফেসবুক আইডি আছে। ভাইকে তার ফ্রেন্ড লিস্ট এ অ্যাড করল সে। তার ভাই তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো তার অনেক বন্ধু-বান্ধব এর সাথে। সাথে তার জিএফ এর সাথেও। রাফা তার ভাই এর জিএফ কে ভাবি বলে ডাকতো FB তে । সামনাসামনি তাদের এখন দেখা হয় নি। রাফা অনেক দুস্টামি করতো তার ভাবির সাথে। হঠাৎ একদিন তার ভাবি তাকে বলল তোমার জিএফ নাই। সে সরাসরি উত্তর দিলো না। ওর ভাবি একজন এর প্রফাইল লিঙ্ক দিয়ে বলল তোমার মত আমার এই বান্ধবীটিও একা। রাফা তাকে ফ্রেন্ড রেকুয়েস্ট পাঠায়। মেয়েটি এক্সেপ্ট করে। তার নাম তানি। তাদের মধ্যে অনেক দিন কথা হয়। তানি কে তার খুব ভালো লেগে যায়। কিন্তু সাহস হয়নি কখনো বলার। এমন করে অনেক দিন কেটে গেল। রাফার SSC পরীক্ষা এসে পরে। পরীক্ষার আগে একদিন সাহস করে তানি কে তার ভাল লাগার কথা বলে। তানি ৩ দিন এর সময় নেয়। এর পর এর কাহিনী আমি আগামি কাল লিখব…………… ৩দিন সময় নিয়ে সে আর আসে না… ৩দিন এর জায়গায় ১৫দিন পার হয়ে যায়। কিন্তু তানি এখনও অনলাইন এ আসে নি। আমি আমার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। তানি কে পাব না বলে ধরে নিলাম। তখন এত কষ্ট লাগে নি। ৩সপ্তাহ পর ………… একদিন দেখি তানি অনলাইন এ। আমি তাকে কিছু বললাম না। সে আমাকে বলল আমি তোমার প্রোপজাল আমি এক্সেপ্ট করলাম। আমি তখন ও এত খুসি হয় নি। আমি তানি কে জিজ্ঞাসা করলাম, এত দিন কোথায় ছিলে?? তানিঃ হ্যাঁ বলব নাকি না বলব তা চিন্তা করতে করতে আমার জ্বর এসে গিয়েছিল। তাই আস্তে পারি নি। এর পর থেকে অনেক কথা হত আমাদের। SSC পরীক্ষা শেস হওয়ার পর একটি মোবাইল কিনলাম। তানি আর আমি এবার মোবাইলে কথা বলেই দিন কাঁটিয়ে দিতাম। এভাবে ৫ টা মাস পার হয়ে গেল…… তানির ফেমিলি থেকে চট্টগ্রাম আসছে সবাই। আমাদের দেখা করার সুযোগ হয়ে এলো। তানি তারিখ ফিক্সড করে জানায়। আমদের সুন্দর ভাবে দেখা ও হয়। আমার জীবনের এইদিনটি অতি গুরুত্তপূর্ন। আমি অন্য দিনের কথা ভুল্লেও এইদিনের কথা ভুলবো না। জীবনে এই প্রথমবার সরাসরি কোন সমবয়সী মেয়ে এর সাথে কথা বলছি তারপর আবার আমি তাকে ভালবাসি। তখন জানি না আমি কোন দেশে হারিয়ে গিয়েছিলাম। একে অন্যের হাত ধরে অনেক্ষন বসে ছিলাম। অনেক একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর দিন সে আবার ঢাকায় চলে গেল। আমার খুব দুঃখ হচ্ছিল যখন তানি চলে যাচ্ছিলো। মোবাইলে কথা বলতাম। তারপরও কেমন জানি লাগতো আমার। শুধু দেখা করতে ইচ্ছা করত। হঠাৎ একদিন তানি এর কোন খোঁজখবর নেই। কল ধরে না। কল ও করে না। আমি তো খুব চিন্তিত। ৮ দিন পর কল এলো তার নাম্বার থেকে। কিন্তু কন্ঠটা তার না। কান্না কান্না কন্ঠে সে মেয়েটি বলল… ভাইয়া, আপু আর নেই। আমি প্রথমে বুঝলাম না কি বলতে চাইছে। জিজ্ঞাসা করলাম সে কে? উত্তর আসলো সে তানির ছোট ভোন। তানি কোথায় জিজ্ঞাস করতেই উত্তর দিল আপু আর পৃথিবীতে নেই। এ কথা বলেই কেঁদে দিলো। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি ঢাকায় যাওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। আবার অই নাম্বার এ কল দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে মারা গেল। বলল ৯ দিন আগে এক্সিডেন্ট হয়েছিল। গতকাল কথাও বলেছে। কিন্তু আজ সকাল ৭টা থেকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেল। অবস্থা খারাপ এর পথে যেতে থাকে এবং ১১ টার দিকে মারা যায়। আমার জীবনে এত দুঃখ কখনও পাইনি। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তানির নাম্বার থেকে ১টা মেসেজ আসলো, যা পাঠিয়েছে তার ছোট ভোন। লেখা ছিল “ ভাইয়া, ওই দিন আমি আপনাকে সব কথা বলতে পারি নাই। আপু আমার কাছে আপনার জন্য একটা মেসেজ দিয়ে গিয়েছিল। মেসেজ টা হল “ আমার মনে হয় চলে যেতে হবে। তুমি আমার জন্য কাদবে না। আমার মত অথবা আমার থেকে আর ভাল কাও কে পেলে জীবন সাথী করে নিও। আমার কথা মনে করে কখনও কাদবে না, মন খারাপ করবে না। যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে ইনশাল্লাহ।“” এই মেসেজ পরে আমার আরও কান্না পেল। কষ্ট নিয়ে কাটিয়ে দিলাম এতটা দিন। তবে দুঃখ টা আরও বেড়ে গেল গত মাসের ২৮ তারিখ। আমি আমার বন্ধু আশিক, আসিফ, সজল এর সাথে অনেক্ষন দুষ্টামি, আড্ডা করে বাসায় ফিরলাম। কিন্তু ঘরে ডুকতেই কারন্ট টা চলে গেল। আমি আবার আড্ডা দেওয়ার স্থান এ গিয়ে বসলাম। ঠিক তখনি আমি দেখতে পেলাম আমার সামনে একটি গাড়িতে বসে আছে। আমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। তখনি আমি আমার মোবাইল থেকে তানি এর নাম্বার এ মিস কল দিলাম। দেখলাম ওই মেয়ে টা তার মোবাইলটি হাত এ নিলো। আমি আবার মিসকল দিলাম। আবার সেই মেয়েটি মোবাইল হাত এ নিলো। আমি পুরো সিউওর হয়ে গেলাম এটা তানি। আমি অনেক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর কাঁদছিলাম। হঠাৎ বুঝলাম তানিও আমাকে দেখেছে। সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। আমি মনে করেছিলাম ও আমার দিকে আসবে। কিন্তু না সে তার গাড়িতে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তানি কে দেখে তখন আমার খুব ঘেন্যা হচ্ছিলো। আমার সাথে অনেক খারাপ কাজ করেছে সে। আমি ঐ স্থান থেকে সাথে সাথে চলে এলাম… চলে আসার সময় আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে………………………………….................
লীজা, একটি CD এর দোকানে কাজ করে।Sales-girl হিসেবে।.. একদিন কাব্য নামের একটি ছেলে সেই দোকানে CD কিনতে আসে।প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় মেয়েটিকে তার।শুধুমাত্র মেয়েটিকে দেখার জন্যই সে সেই দোকানে CD কিনতে আসতো।বাসায় গিয়ে CD এর প্যাকেট খুলেও দেখত না।এভাবে কেটে গেল বহুদিন। কাব্যর বাড়ি CDতে ভরে যাওয়া শর্তেও সে নিয়মিত দোকানে যেত এবং লীজার কাছ
থেকে নতুন CD নিয়ে আসতো...একদিন দোকানে গিয়ে দেখল মেয়েটি নেই।দোকানের অন্য কর্মচারীর
সাথে কথা বলে সে জানতে পারল মেয়েটি রোড Accident এ মারা গিয়েছে।
নিজেকে সামলাতে পারলনা কাব্য।সে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র স্মৃতি CD এর প্যাকেট গুলো বের করল।
বের করে দেখল মেয়েটি প্রতিদিন প্যাকেট এর ভিতর একটি করে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সে খুলেও দেখেনি...এখন আমার প্রশ্নঃ এখন ছেলেটি কি জীবনে মেয়েটিকে ভুলে যেতে পারবে ?????
থেকে নতুন CD নিয়ে আসতো...একদিন দোকানে গিয়ে দেখল মেয়েটি নেই।দোকানের অন্য কর্মচারীর
সাথে কথা বলে সে জানতে পারল মেয়েটি রোড Accident এ মারা গিয়েছে।
নিজেকে সামলাতে পারলনা কাব্য।সে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র স্মৃতি CD এর প্যাকেট গুলো বের করল।
বের করে দেখল মেয়েটি প্রতিদিন প্যাকেট এর ভিতর একটি করে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সে খুলেও দেখেনি...এখন আমার প্রশ্নঃ এখন ছেলেটি কি জীবনে মেয়েটিকে ভুলে যেতে পারবে ?????
লাল গোলাপ...
পুতুলের মতো সাজানো হয়েছে বাড়িটাকে আজ। বাহারি ফুল, রঙিন কাপড় ও কাগজের সমাহার পুরো বাড়ি জুড়ে। তার উপর রং বেরংয়ের মরিচা বাতি গুলো প্রজ্জলিত হচ্ছে সারা বাড়িময়। তারা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে বিরামহীন চন্চলতা নিয়ে।আমার মনের ভাবনা গুলিও যেন এই মরিচা বাতিদের সাথে খেলা করার ব্যার্থ প্রয়াস চালাচ্ছে।কিন্তু হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। এক ধরনের জড়তা জমেছে আমার মনের ভাবনা গুলুতে।বলা যায় কেউ একজন অসীম জড়তা নিয়ে আটকে রয়েছে এই হৃদয়ে।যে জড়তা কখনো ছুটবার নয়। হয়তো ইচ্ছে করেই পুষে চলেছি এগুলোকে।
আজ আমার সোহাগ রাত। কিন্তু সোহাগ রাত পালন করার মতো কোন চিন্তা ভাবনাই এখন আমার মনে কাজ করছে না। নতুন বউকে খাটের উপর বসিয়ে রেখেই বারান্দায় এসে সিগারেটের পর সিগারেট টানছি আর এইসব সাত পাঁচ ভাবছি। কিছুটা জোড় করেই বিয়েটা করানো হয়েছে আমাকে। বাবার আদেশ এবং মায়ের অশ্রুসিক্ত নয়নের আবদার উপেক্ষা করতে না পেরেই বিয়েটা করা।মায়ের মতে আমার নতুন বউ নাকি খুব সুন্দরী এবং সুশীল পরিবারের মেয়ে। কিন্তু তাতে আমার কি!! আমার কিছু যায় আসেনা।এখন পর্যন্ত মেয়েটির ছবিও দেখিনি। দেখার কোন ইচ্ছাও নাই!!যার সাথে কখনো মনের মিল হবার নয় তাকে দেখেই বা কি লাভ !!
আজ হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ৪ বছর পূর্বের সেই ভার্সিটি জীবনে।বারবার মনে পরছে সেই দিনটির কথা। যেদিন প্রথমবার দেখা হয়েছিল তার সাথে। ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণায় কফির মগ হাতে নিয়ে বসে ছিল মেয়েটি।জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে দেখে হৃদয়ের স্পন্দন গতি বেড়ে গিয়েছিল আমার। মনে হয়েছিল এই অপ্সরীর জন্যেই আমার পৃথিবীতে আসা। তাকে ছাড়া জীবন অচল,অর্থহীন।।
আমার এক বন্ধুর কল্যানেই পরিচয় হয় তার সাথে।তার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী ছিল সে। সেদিন ই আমি প্রথম জানতে পারি তার নাম।
সামিয়া।। এই নামটি যেন আমার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল চিরদিনের জন্য।। সেদিনের পর প্রতিদিনই দেখা হতো আমাদের। আমাদের সম্পর্কটা এক সময় আপনি থেকে তুমি গড়িয়ে তুই এ রুপান্তরিত হয়। একে অপরকে ছাড়া একটি মুহূর্ত ও থাকতে পারতামনা আমরা। আমাদের বন্ধুত্ব সারা ভার্সিটি জুড়ে ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় কোথায় আমাদের। আমরা আমাদের বন্ধুত্বটা ঠিকই বহাল রেখেছিলাম ভার্সিটির শেষ দিনটি পর্যন্ত।।
সামিয়াকে প্রথম দেখার দিনটি থেকেই তার উপর দুর্বল হয়ে পরেছিলাম আমি। তাকে বন্ধু থেকে কিছুটা বেশিই ভাবতাম সর্বদা। যতক্ষণ তার সাথে থাকতাম এক ধরণের অজানা ভাল লাগা কাজ করতো আমার মাঝে। তার প্রতিটি কথা,প্রতিটি কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আমি।এক অসীম মায়ায় আটকা পড়েছিলাম এই মেয়েটিকে ঘিরে। ভালবাসার মায়া।। সামিয়াকে আমি মনে মনে অনেক ভালবাসলেও মুখ ফোটে কখনো বলা হয়নি তাকে নিজের হৃদয়ের অনুভূতি গুলো। অনেক ভয় পেতাম যদি পরিশেষে এই বন্ধুত্বটাও হাড়াতে হয়!!এই ভেবে সর্বদাই এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়ে যেতাম।।
আমাদের ভার্সিটি জীবনের পরেও মাঝে মাঝে দেখা করতাম আমরা তেমনি একদিন সামিয়ার ফোন আসে দেখা করার জন্যে। ফোনে বলেছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে আমাকে। আমি ভাবলাম এইটাই সুযোগ। আজ তাকে ভালবাসার কথাটি বলার। তার প্রিয় এক মুঠো লাল গোলাপ নিয়ে গেলাম সেদিন। কিন্তু তার দেয়া বিয়ের কার্ডটি হাতে নিয়ে আর ভালবাসার কথাটি বলা হলো না আমার। যে লাল গোলাপ নিয়ে নিজের ভালবাসার ফুল ফোটাতে চেয়েছিলাম সেই লাল গোলাপ দিয়েই তার নতুন জীবনের শুভেচ্ছা প্রদান করে ফিরে আসলাম।এটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা। আমার ভালবাসার পরিসমাপ্তি।।
বারান্দায় বসে থাকতে আর ভাল লাগেনা। চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসে। হাতের শেষ সিগারেটটা শেষ করেই রুমের ভেতরে যাই আমি। মাথার ঘুমটা না উঠিয়েই খাটের উপর জড়সড় হয়ে হয়ে ঘুমিয়ে পরে আমার নতুন বউ। নিঃশব্দে তার কাছে যাই আমি। গায়ের উপর কাথা জড়িয়ে দিয়ে নিজের বালিশ নিয়ে সোফায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি সাথে সাথেই।।
চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ভাঙ্গে আমার। হাতের ঘড়িটাতে চোখ পড়তেই দেখি ১০।১৫ মি। কখনো এতো দেড়ীতে ঘুম থেকে উঠিনা আমি।হয়তো কাল রাতে দেড়ী করে ঘুমানোর ফল এইটা। সোফার সামনে টেবিলে এক মগ গরম কফি রাখা। তার পাশে আমাদের বিয়ের কার্ড। ডান হাতে কফির মগ হাতে নিয়ে বাম হাতে কার্ডটি খুলি আমি। কনের নামের জায়গায় লিখা-
“সাদিয়া মেহজাবিন নদী”
নামটা অনেকটা মনে ধরে যায় আমার। মনে হলো যেন তিনটি সুন্দর নামকে একত্রিত করে একটি নাম বানানো হয়েছে।।
এরই মাঝে মাথায় ঘোমটা দিয়েই ঘরে প্রবেশ করে নদী। সোফাতে বসেই তার দিকে চোখ তুলি আমি। কিন্তু সেই চোখ আর সরাতে পারিনা কিছুতেই। এতো স্নিগ্ধ এবং কোমল চেহারার মেয়ে আমি হয়তো জীবনে প্রথম দেখলাম। তার কাজল টানা চোখ গুলি ঝিলের জলের মতো স্বচ্ছ।যেন এখনই ডুব দিয়ে সাতার কাটা যাবে। তার উপর পড়নের লাল শাড়িটা তার সৌন্দর্যটা বাড়িয়ে দিয়েছিল শতগুণে।।
এভাবেই কাটছিলো আমার দিন গুলি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অফিসে চলে যেতাম এবং ফিরতাম অনেক রাত করে। নদীর সাথে খুবই কম সময় কাটাতাম আমি। তার স্নিগ্ধতা ও সৌন্দর্য্য আমাকে আকৃষ্ট করতো সর্বদা। কিন্তু এক ধরনের বাধা কাজ করতো আমাদের মাঝে। যে বাধার কারণে সব আকর্ষণ ছিন্ন করে দিতো আমার। দূরে ঠেলে দিতো তার কাছ থেকে যোজন যোজন পথ। নদীকে আমি কখনো ভালবাসা দিতে না পারলেও তার পক্ষ থেকে কোন আক্ষেপই শুনিনি,,ছিলোনা কোন আবদার ও।আমার ঐ দূরত্ব ও নির্লিপ্ততাকে গ্রহণ করে সংসার করে চলেছিলো অনায়াসেই। হয়তো মেয়েদের একটা আলাদা শক্তি থাকে। যা দিয়ে তারা নিরঙ্কুশভাবে ভালবাসা বিলিয়ে যেতে পারে কোন প্রকার প্রতিদানের আশা ছাড়াই।
প্রায় চার মাসের মতো হয়ে গেলো আমাদের বিয়ের।মায়ের কথায় নদীকে তার বাবার বাড়ীতে নিয়ে চললাম আমি। এই প্রথম আমি তাকে নিয়ে বেড় হই। ঢাকার ব্যাস্ত রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম আমি এবং আমার পাশে বসে আছে নদী। গাড়ির জানালা দিয়ে প্রবেশ করা বাতাসে তার খোলা চুলগুলি বারবার সরে আসছিলো আমার দিকে।আড় চোখে আমি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম এবং মুগ্ধ হচ্ছিলাম তার সৌন্দর্য্যে। এরই মাঝে সিগনাল পরে রাস্তায়। গাড়ি থামিয়ে তার দিকে তাকালাম আমি। বাইরে ফুলের দোকানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো মেয়েটি। সেদিকে তাকাতেই দেখলাম অনেকগুলো লাল গোলাপ সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরো দোকান জুড়ে।।
এক দৌড়ে চলে গেলাম ফুলের দোকানে।এক মুঠো লাল গোলাপ হাতে নিয়েই পা বাড়ালাম গাড়ির দিকে।এরই মাঝে সিগনাল ভাঙ্গলো রাস্তার।গাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই হঠাৎ সো সো শব্দ করে একটি বাস চলে গেলো চোখের সামনে দিয়ে।কিছু বোঝে উঠার আগেই এক চিৎকার দিয়ে নদী এসে ঝাপিয়ে পড়লো বুকে। তার চোখের পানিতে ভিজতে শুরু করলো আমার সাদা শার্ট। নিজের অজান্তেই দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম নদীকে। মনে হলো যেনো মৃত্যুকে ফাকি দিয়ে সদ্য জয় করে নিলাম এক নতুন জীবন। ভালবাসাময় নতুন জীবন।।
আজ আমার সোহাগ রাত। কিন্তু সোহাগ রাত পালন করার মতো কোন চিন্তা ভাবনাই এখন আমার মনে কাজ করছে না। নতুন বউকে খাটের উপর বসিয়ে রেখেই বারান্দায় এসে সিগারেটের পর সিগারেট টানছি আর এইসব সাত পাঁচ ভাবছি। কিছুটা জোড় করেই বিয়েটা করানো হয়েছে আমাকে। বাবার আদেশ এবং মায়ের অশ্রুসিক্ত নয়নের আবদার উপেক্ষা করতে না পেরেই বিয়েটা করা।মায়ের মতে আমার নতুন বউ নাকি খুব সুন্দরী এবং সুশীল পরিবারের মেয়ে। কিন্তু তাতে আমার কি!! আমার কিছু যায় আসেনা।এখন পর্যন্ত মেয়েটির ছবিও দেখিনি। দেখার কোন ইচ্ছাও নাই!!যার সাথে কখনো মনের মিল হবার নয় তাকে দেখেই বা কি লাভ !!
আজ হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ৪ বছর পূর্বের সেই ভার্সিটি জীবনে।বারবার মনে পরছে সেই দিনটির কথা। যেদিন প্রথমবার দেখা হয়েছিল তার সাথে। ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণায় কফির মগ হাতে নিয়ে বসে ছিল মেয়েটি।জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে দেখে হৃদয়ের স্পন্দন গতি বেড়ে গিয়েছিল আমার। মনে হয়েছিল এই অপ্সরীর জন্যেই আমার পৃথিবীতে আসা। তাকে ছাড়া জীবন অচল,অর্থহীন।।
আমার এক বন্ধুর কল্যানেই পরিচয় হয় তার সাথে।তার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী ছিল সে। সেদিন ই আমি প্রথম জানতে পারি তার নাম।
সামিয়া।। এই নামটি যেন আমার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল চিরদিনের জন্য।। সেদিনের পর প্রতিদিনই দেখা হতো আমাদের। আমাদের সম্পর্কটা এক সময় আপনি থেকে তুমি গড়িয়ে তুই এ রুপান্তরিত হয়। একে অপরকে ছাড়া একটি মুহূর্ত ও থাকতে পারতামনা আমরা। আমাদের বন্ধুত্ব সারা ভার্সিটি জুড়ে ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় কোথায় আমাদের। আমরা আমাদের বন্ধুত্বটা ঠিকই বহাল রেখেছিলাম ভার্সিটির শেষ দিনটি পর্যন্ত।।
সামিয়াকে প্রথম দেখার দিনটি থেকেই তার উপর দুর্বল হয়ে পরেছিলাম আমি। তাকে বন্ধু থেকে কিছুটা বেশিই ভাবতাম সর্বদা। যতক্ষণ তার সাথে থাকতাম এক ধরণের অজানা ভাল লাগা কাজ করতো আমার মাঝে। তার প্রতিটি কথা,প্রতিটি কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আমি।এক অসীম মায়ায় আটকা পড়েছিলাম এই মেয়েটিকে ঘিরে। ভালবাসার মায়া।। সামিয়াকে আমি মনে মনে অনেক ভালবাসলেও মুখ ফোটে কখনো বলা হয়নি তাকে নিজের হৃদয়ের অনুভূতি গুলো। অনেক ভয় পেতাম যদি পরিশেষে এই বন্ধুত্বটাও হাড়াতে হয়!!এই ভেবে সর্বদাই এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়ে যেতাম।।
আমাদের ভার্সিটি জীবনের পরেও মাঝে মাঝে দেখা করতাম আমরা তেমনি একদিন সামিয়ার ফোন আসে দেখা করার জন্যে। ফোনে বলেছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে আমাকে। আমি ভাবলাম এইটাই সুযোগ। আজ তাকে ভালবাসার কথাটি বলার। তার প্রিয় এক মুঠো লাল গোলাপ নিয়ে গেলাম সেদিন। কিন্তু তার দেয়া বিয়ের কার্ডটি হাতে নিয়ে আর ভালবাসার কথাটি বলা হলো না আমার। যে লাল গোলাপ নিয়ে নিজের ভালবাসার ফুল ফোটাতে চেয়েছিলাম সেই লাল গোলাপ দিয়েই তার নতুন জীবনের শুভেচ্ছা প্রদান করে ফিরে আসলাম।এটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা। আমার ভালবাসার পরিসমাপ্তি।।
বারান্দায় বসে থাকতে আর ভাল লাগেনা। চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসে। হাতের শেষ সিগারেটটা শেষ করেই রুমের ভেতরে যাই আমি। মাথার ঘুমটা না উঠিয়েই খাটের উপর জড়সড় হয়ে হয়ে ঘুমিয়ে পরে আমার নতুন বউ। নিঃশব্দে তার কাছে যাই আমি। গায়ের উপর কাথা জড়িয়ে দিয়ে নিজের বালিশ নিয়ে সোফায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি সাথে সাথেই।।
চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ভাঙ্গে আমার। হাতের ঘড়িটাতে চোখ পড়তেই দেখি ১০।১৫ মি। কখনো এতো দেড়ীতে ঘুম থেকে উঠিনা আমি।হয়তো কাল রাতে দেড়ী করে ঘুমানোর ফল এইটা। সোফার সামনে টেবিলে এক মগ গরম কফি রাখা। তার পাশে আমাদের বিয়ের কার্ড। ডান হাতে কফির মগ হাতে নিয়ে বাম হাতে কার্ডটি খুলি আমি। কনের নামের জায়গায় লিখা-
“সাদিয়া মেহজাবিন নদী”
নামটা অনেকটা মনে ধরে যায় আমার। মনে হলো যেন তিনটি সুন্দর নামকে একত্রিত করে একটি নাম বানানো হয়েছে।।
এরই মাঝে মাথায় ঘোমটা দিয়েই ঘরে প্রবেশ করে নদী। সোফাতে বসেই তার দিকে চোখ তুলি আমি। কিন্তু সেই চোখ আর সরাতে পারিনা কিছুতেই। এতো স্নিগ্ধ এবং কোমল চেহারার মেয়ে আমি হয়তো জীবনে প্রথম দেখলাম। তার কাজল টানা চোখ গুলি ঝিলের জলের মতো স্বচ্ছ।যেন এখনই ডুব দিয়ে সাতার কাটা যাবে। তার উপর পড়নের লাল শাড়িটা তার সৌন্দর্যটা বাড়িয়ে দিয়েছিল শতগুণে।।
এভাবেই কাটছিলো আমার দিন গুলি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অফিসে চলে যেতাম এবং ফিরতাম অনেক রাত করে। নদীর সাথে খুবই কম সময় কাটাতাম আমি। তার স্নিগ্ধতা ও সৌন্দর্য্য আমাকে আকৃষ্ট করতো সর্বদা। কিন্তু এক ধরনের বাধা কাজ করতো আমাদের মাঝে। যে বাধার কারণে সব আকর্ষণ ছিন্ন করে দিতো আমার। দূরে ঠেলে দিতো তার কাছ থেকে যোজন যোজন পথ। নদীকে আমি কখনো ভালবাসা দিতে না পারলেও তার পক্ষ থেকে কোন আক্ষেপই শুনিনি,,ছিলোনা কোন আবদার ও।আমার ঐ দূরত্ব ও নির্লিপ্ততাকে গ্রহণ করে সংসার করে চলেছিলো অনায়াসেই। হয়তো মেয়েদের একটা আলাদা শক্তি থাকে। যা দিয়ে তারা নিরঙ্কুশভাবে ভালবাসা বিলিয়ে যেতে পারে কোন প্রকার প্রতিদানের আশা ছাড়াই।
প্রায় চার মাসের মতো হয়ে গেলো আমাদের বিয়ের।মায়ের কথায় নদীকে তার বাবার বাড়ীতে নিয়ে চললাম আমি। এই প্রথম আমি তাকে নিয়ে বেড় হই। ঢাকার ব্যাস্ত রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম আমি এবং আমার পাশে বসে আছে নদী। গাড়ির জানালা দিয়ে প্রবেশ করা বাতাসে তার খোলা চুলগুলি বারবার সরে আসছিলো আমার দিকে।আড় চোখে আমি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম এবং মুগ্ধ হচ্ছিলাম তার সৌন্দর্য্যে। এরই মাঝে সিগনাল পরে রাস্তায়। গাড়ি থামিয়ে তার দিকে তাকালাম আমি। বাইরে ফুলের দোকানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো মেয়েটি। সেদিকে তাকাতেই দেখলাম অনেকগুলো লাল গোলাপ সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরো দোকান জুড়ে।।
এক দৌড়ে চলে গেলাম ফুলের দোকানে।এক মুঠো লাল গোলাপ হাতে নিয়েই পা বাড়ালাম গাড়ির দিকে।এরই মাঝে সিগনাল ভাঙ্গলো রাস্তার।গাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই হঠাৎ সো সো শব্দ করে একটি বাস চলে গেলো চোখের সামনে দিয়ে।কিছু বোঝে উঠার আগেই এক চিৎকার দিয়ে নদী এসে ঝাপিয়ে পড়লো বুকে। তার চোখের পানিতে ভিজতে শুরু করলো আমার সাদা শার্ট। নিজের অজান্তেই দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম নদীকে। মনে হলো যেনো মৃত্যুকে ফাকি দিয়ে সদ্য জয় করে নিলাম এক নতুন জীবন। ভালবাসাময় নতুন জীবন।।
একটি ভালবাসার গল্প:
এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে টানা চার মাস পর ক্যাডেট কলেজ থেকে বাসায় আসলাম। ছুটিতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা করলাম। কিন্তু বাসায় এসে আমার মাথায় হাত। কারন আমি কলেজে থাকা অবস্থায় আমাদের বাসা চেঞ্জ হয়েছে। নতুন বাসায় এসে কিছুটা অস্বস্তিতে পরলাম। কাউকে চিনিনা। বাসায় এসে কিছুক্ষন ধাতস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি, এমন সময় কেউ একজন বলে উঠল-
- আন্টি……………একটা মেয়ে দৌড়ে ঘরে এসে ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। আর আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অপূর্ব!!! চোখ ফেরাতে পারছি না। মাথায় সেই বিখ্যাত কবিতা চলে এল-“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ”।মনে মনে নিজেকে গালাগালি দিলাম তার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য। আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু এসে মেয়েটাকে দেখে খুশি হয়ে গেল।
- আরে তানিয়া, বাইরে কেন? ভিতরে এস।
- না, আন্টি। থাক। পরে আসব।
- আরে আস তো।
মেয়েটা লজ্জাবনত মুখে ঘরে এসে বসল। আমি আম্মুর ভয়ে তার দিকে তাকাতে সাহস পেলাম না। তারপর ও আড় চোখে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আম্মু বোধহয় আমার কৌতূহল টের পেয়ে বললেন-
- ওর নাম তানিয়া। এবার এইচ.এস.সি দেবে। আর ও আমার ছেলে, তুহিন। এইবার এস.এস.সি দিয়ে কলেজ থেকে ছুটিতে এসেছে। (বুঝতে পারলাম আমাকে নিয়ে আগেও কথা হয়েছে)
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিল। আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম( এত সুন্দর একটা মেয়ে অথচ আমার সিনিয়ার, কেমন রাগ টা লাগে……গররর) তোমরা বসে গল্প কর, আমি একটু আসছি।
আম্মু পাশের ঘরে গেলেন হয়ত কিছু খাবার নিয়ে আসতে। আমি একটু অস্বস্তিতে পড়লাম কি নিয়ে কথা বলব ভেবে। আমার মত সে ও চুপ করে বসে রইল। আমাদের প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটা নিরবতা দিয়েই কাটল।
২.
দু’ তিন দিন পার হয়ে গেল এখনো তার সাথে কোন কথা হয়নি। এক বিকেলে দেখি আমাদের বাসার উঠোনে কয়েকজন ক্যারাম খেলছে। আমি কাছে গিয়ে দেখতে লাগলাম। একটু পরেই একজন চলে গেল তার মায়ের ডাকে। বাকিরা সবাই আমাকে জোরাজুরি করতে লাগল খেলার জন্য। আমি রাজি হয়ে গেলাম। যে চলে গেছে তার জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে দেখি আমার সাথে জুটি হচ্ছে তানিয়া। আমি এতক্ষন খেয়াল ই করিনি যে সে ও খেলছে।
আমি ইন্টার হাউস প্লেয়ার না হলেও খুব একটা খারাপ খেলি না। তাই একটু পরেই নিজের কারিশমা দেখান শুরু করলাম। নিজের ভিতর পার্ট অনুভূত হল(:))। সে ও অনেক ভাল খেলছিল। প্রথম সেট জেতার পর তানিয়া আমার দিকে তাকিয়ে অপূর্ব একটা হাসি দিল। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে তার ডান হাত উঁচু করে একটা হাই ফাইভ দিল। আমি তার হাতের স্পর্শে এক মুহূর্তের জন্য অনড় হয়ে ছিলাম।
- তুমি তো অসাধারণ খেল। কলেজে কি কম্পিটিশন হয়?
- হ্যাঁ।
- তুমি খেল তাতে?
- আমি ইন্টার হাউস চ্যাম্পিয়ন। (মিথ্যা বলতে একটু খারাপ লাগছিল!!!!!!!!!!)
- ওয়াও।
তার মুগ্ধ হওয়া দেখে আমার খুব ভাল লাগল। কি যে সুন্দর দেখাচ্ছিল! এরকম সৌন্দর্যের জন্য আমি হাজার টা মিথ্যা বলতে পারি। আমি আবার তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। পাশের একজনের গলা খাঁকারিতে সম্বিত ফিরে এল। তারপর আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। সেদিন সবগুলো খেলাতেই আমরা জিতেছি। এরপর থেকে নিয়মিত খেলা হত। আর বেশির ভাগ খেলাতেই সে আমার জুটি থাকত।
৩.
ইতোমধ্যে আমি বাড়িতে আসার তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তার পরীক্ষা কাছে চলে এসেছে। আর মাত্র সাত দিন বাকি। তার ভিতর কোন ভাবান্তর নেই। সে দিব্যি আছে নিজের মত। আমি মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকি। তার সাথে গল্প করি। অন্য রকম এক উন্মাদনা কাজ করে নিজের ভিতর। তার মায়ের কথায় তাকে মাঝে মাঝে ইংলিশ টা দেখিয়ে দিতাম। একদিন তাদের ঘরের সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছি, সে আমার সামনেই একটা চেয়ারে বসে পড়ছে। আমি তার একটা বই উলটে পালটে দেখছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে বলে উঠল-
- বইয়ের ভিতরে মাঝামাঝি জায়গায় দেখ একটা পাতা আছে।
আমি কিছুক্ষণ খোঁজার পর দেখি এক জায়গায় একটা গাছের পাতা। তার মাঝে কিছু লেখা। আমি পাতা টা কাছে নিয়ে এসে দেখি তাতে লেখা- “Do you love me?”
আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু কিছু বলার আগে দেখি তার ছোট ভাই চলে এসেছে। তাই আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন- “Is she serious?”
৪.
তানিয়ার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এতদিনে টের পেলাম আমার মা ওকে কত টা পছন্দ করে। এমনিতে প্রতিদিন কিছু রান্না করলেই ওর জন্য পাঠিয়ে দেয়। একদিন আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিল ওর পরীক্ষা শেষ হলে ওকে নিয়ে আসার জন্য। আমি তো অবাক। আন্টির ও দেখি তাতে সায় আছে। কি আর করা। যেদিন যেদিন পরীক্ষা থাকত আমি গিয়ে তাকে নিয়ে আসতাম। রাস্তায় হেঁটে আসার সময় অনেক গল্প হত। আমার ভালই লাগত। আমাদের একটা অদ্ভুত খেলা ছিল। প্রায় দিন ই আমরা যার যার বাসার সামনের সিঁড়িতে বসে চিরকুট চালাচালি করতাম। ডাক পিওন ছিল পাশের বাসার একটা বাচ্চা মেয়ে। খুব মজা লাগত এভাবে চিরকুট পাঠাতে। একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম সেই পাতা টার ব্যাপারে। “সেদিন যে প্রশ্ন টা করেছিলে সেটা কার উদ্দেশ্যে ছিল?” সে প্রশ্ন টা পরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর কিছু একটা লিখে আমার কাছে পাঠাল। আমি কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি তাতে লেখা-
- তোমার উদ্দেশ্যে।
- Are you serious?
- হ্যাঁ। এখন তোমার Answer দাও।
আমি অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলাম। কি উত্তর দেব তাকে? সে আমার থেকে কমপক্ষে দু’বছরের বড়।(পরে জেনেছি সে আমার থেকে নয় মাসের বড়)। আর আমার মা জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আবার তার দিকে তাকিয়ে আমি চোখ ফেরাতে পারিনা। মনে মনে তাকে আমি পছন্দ যে করিনা তা না। কিন্তু তাই বলে তার সাথে আমার সম্পর্ক হওয়াও অসম্ভব। আমি তাকে কিছুই বলতে পারলাম না। নিজেকে কেন জানিনা খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল।
৫.
ভেবেছিলাম সে হয়ত আমার সাথে আর কথাই বলবে না। কিন্তু দেখলাম আমার ধারনা ভুল। সে আগের মতই আমার সাথে গল্প করছে। আমার খুব ভাল লাগল তার ব্যাবহারে। সে হয়ত নিজে থেকেই বুঝতে পেরেছে যে এ ভালবাসা কোন দিন সম্ভব নয়। আমাদের বন্ধুত্ব আগের থেকে আরও ভাল হল। আমাকে সে অনেক কথা বলত নিজের সম্পর্কে। আমার খুব ভাল লাগত তার কথা শুনতে।
সেবার আমার জন্মদিনে বছরের প্রথম বৃষ্টি হয়। বিকেলে আমরা তাদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর ছাঁদে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ করেই কোন আগাম সংকেত না দিয়েই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে অসমাপ্ত একটা রুমে আশ্রয় নিলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টির তেজ কমে গেল। আমি বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। সে কোথা থেকে জানিনা হঠাৎ একটা টুকটুকে লাল গোলাপের কলি বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। তারপর আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে আমার ঠোঁটে আলতো করে একটা কিস করল।
- Happy Birthday to You.
সে আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আর আমি বজ্রাহতের মত সেই অন্ধকার প্রায় ঘরে দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতে একটি লাল গোলাপ নিয়ে।
৬.
আড়াই মাস পর আমার এস.এস.সির রেজাল্ট দিল। A+ পেয়ে ভালই লাগছিল। তখনও গোল্ডেন এর খবর আসেনি। আম্মু খুশিতে বাসার আশে পাশের সবাই কে মিষ্টি খাওয়াল। বিকেলে তানিয়া কে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। ওর পরীক্ষা প্রায় শেষ। আর বোধহয় একটা বাকি আছে। তাও ৫ দিন পর। আমরা এখন নিয়মিত বের হই হাঁটতে। ওর সাথে গল্প করতে খুব ভাল লাগে আমার। কিভাবে যে সময় টা চলে যায় টের ই পাইনা। আমার মাথায় যে এত গল্প ছিল আমি নিজেও আগে টের পাইনি। রাজ্যের কথা হয় ওর সাথে। গল্পের কোন শুরু-শেষ নেই।
- আমার রেজাল্টে তুমি খুশি হওনি?
- অসম্ভব খুশি হয়েছি। আমার খুব ভাল লাগছে। ইনশাল্লাহ তুমি গোল্ডেন ও পাবে, দেখ।
- দোয়া কর।
দিঘীর পাড়ে এসে বসলাম। অপূর্ব সুন্দর একটা জায়গা। আমার খুব ই ভাল লাগে এখানে এসে বসতে। তার ওপর ও সাথে থাকলে তো কথাই নেই। শুধু ওর দিকে তাকিয়েই সময় পার করে দেয়া যায়। মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছি। “মেমসাহেব” এ পড়া সেই শের এর অনুবাদ মনে পড়ে গেল-
“তুমি আমার সামনে বসে আছ, আমার সাথে কথা বলছ।
তুমিই বল তোমাকে দেখব, না তোমার সাথে কথা বলব”।
ওর ভাল লাগা, না লাগা জিনিস গুল কেন জানি নিজের সাথে মিলে যাচ্ছে। না মিললেও নিজের ভালোলাগাকে পরিবর্তন করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
- কাল আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
আমার কথা শুনেই ওর মুখটা কাল হয়ে গেল।
- কেন?
- আব্বু যেতে বলেছে। আমাকে একটা মোবাইল কিনে দেবে। তাই পছন্দ করতে যেতে হবে।
- না গেলে হয়না?
ওর কষ্ট আমাকে ছুঁয়ে গেল। খুবই খারাপ লাগছে। নিজেকে স্বার্থপর মনে হল খুব। কী দরকার যাওয়ার? নাই বা গেলাম। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারলাম না। নিজের একটা মোবাইলের আশা আমার অনেক দিনের। সে আশাটাকে জলাঞ্জলি দিতে খুব কষ্ট লাগল।
- আমাকে যেতেই হবে। মাত্র তো কয়েকদিন। তারপর ই ফিরে আসব আবার। প্লিজ তুমি আমার উপর রাগ করে থেক না।
- ধুর পাগল। আমি তোমার উপর রাগ করব কেন? তুমি যাও কয়েকদিন ঘুরে আস।
ও না বললেও বুঝতে পারছিলাম কষ্টে ওর বুক ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে স্বীকার করছে না। ওর প্রতি ভালবাসা আমার কয়েকগুন বেড়ে গেল।
৭.
ভেবেছিলাম ঢাকায় অনেক মজা হবে। কিন্তু এসে কিছুই ভাল লাগছিল না। বারবার আসার সময়কার ওর মুখটা ভেসে উঠছিল। আসার আগে ও আমার রুমে এসে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিল। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি ওর গাল বেয়ে পানির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। আমি আশে পাশে কিছু চিন্তা না করেই ওর মুখটা দু’হাত দিয়ে তুলে ধরে ওর ঠোঁটে একটা কিস করলাম। আমার পক্ষ থেকে এই প্রথম ওকে কিস করা। ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। একটু পর ই ও নিজেকে শান্ত করে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে একটা হাসি দিল।
- ভাল ভাবে যেও। আর তাড়াতাড়ি চলে এস। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। চুপ করে বসে থাকলাম। একটু পর আম্মু বাইরে থেকে এলে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম। ও আম্মুর সাথে আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগল। বাস ছাড়া পর্যন্ত তারা দাঁড়িয়েই ছিল। জানালা দিয়ে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আস্তে আস্তে ও দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। কেন জানিনা চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
আশা করেছিলাম ঢাকায় এসে নারায়ণগঞ্জ যাব। ক্লাস 6 এ ক্যাডেট কোচিং করার জন্য সেই যে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে টাঙ্গাইল এসেছিলাম আর ফেরা হয় নি। আমার স্কুল জীবনের বন্ধুদের খুব মিস করি। কিন্তু বিধি বাম। ঢাকায় এসে সাত দিন থাকলাম, একটা দিন ও বৃষ্টির জন্য বাইরেই বেরুতে পারলাম না। শুধু মোবাইল কেনাই সার হল, আর কিছুই করা হয়নি। সারাদিন ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে। কি আর করা, ব্যর্থ মনোরথে আবার বাড়িতে ফিরে এলাম।(এখন পর্যন্ত ও আমি নারায়ণগঞ্জ যেতে পারিনি :()।
বাসায় এসে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার বাসায় তানিয়াকে আর দেখা যাচ্ছে না কখনো। খুব অবাক লাগল। ওকে জিজ্ঞেস করাতে কিছুই বলল না। শেষে আমার ছোট বোনের কাছে শুনলাম কাহিনী। আমি যেদিন ঢাকা যাই সেদিন আমার এক খালাত বোন আসে আমাদের বাসায়। আমি তার আগমন টের পাইনি। আমার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সে আমাকে আর তানিয়াকে একসাথে দেখতে পায়। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি তখন তানিয়া কে কিস করছিলাম। সে কিছু না বলেই বেড়িয়ে চলে যায় বাসা থেকে। পরবর্তীতে আমি চলে গেলে বাসায় এসে আম্মুকে সব কথা বলে দেয়। আর তারপর আম্মু তানিয়ার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। তানিয়াও বুঝতে পারে যে কোন একটা সমস্যা হয়েছে, তাই সে আর আমাদের বাসায় আসে না। মনে হল নিজের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল। সব শুনে আমি পাথরের মত চুপ করে বসে রইলাম। আগের মত বাইরে বেরাতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মাঝে মাঝে আমি ওদের বাসায় যেতাম ঠিক ই কিন্তু ও আর আমার বাসায় আসত না। এদিকে আমার কলেজে যাওয়ার সময় এসে গেল। না বলা এক যন্ত্রণা নিয়ে কলেজে ফিরে গেলাম। এসে কয়েকদিনের মধ্যেই টের পেলাম জীবনে প্রথম বারের মত আমি সত্যি সত্যি কাউকে খুব বেশী ভালবেসে ফেলেছি।
৮.
কলেজে এসে অনেকদিন পর প্রিয় বন্ধু গুলোকে দেখে খুব ভাল লাগল। ছুটিতে কে কি করেছে, কে খুব সুন্দরী এক মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে, কে ইতোমধ্যেই প্রেম নিবেদন করে ফেলছে এসব জানতে জানতেই কয়েকদিন পার হয়ে গেল। চির পরিচিত সেই মাঠ আর একাডেমিক ব্লকে প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছুদিনেই নিজেকে খুব একা মনে হল। বারবার ছুটিতে কাটান তানিয়ার সাথের মুহূর্ত গুল মনে পরতে লাগল। প্রেপ টাইম এ ক্লাসের বদলে বাইরের বারান্দায় দাঁড়াতেই বেশী ভাল লাগত। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগত। মনে হত চাঁদটাও আমার মত নিঃসঙ্গ। মাঝে মাঝে মনে হত হয়ত সে ও আমার মতই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তে। দিন গুলো যেন কাটতেই চাইছিল না। বন্ধুরা শিঘ্রীই বুঝে ফেলল আমার রোগ টা কোন জায়গায়। শুরু হল আমাকে জ্বালান। তবুও যন্ত্রণা গুলো ভালই লাগত।
সবসময় ওর কথা মনে পড়লেও পরীক্ষা গুলো কিভাবে জানি ভাল হয়ে গেল। অথচ পড়া লেখার খাতায় ততটা দাগ পড়েনি, যতটা গল্পের খাতায় পড়েছে। বুঝলাম আমি জাতে মাতালদের দলে হলেও তালে ঠিক ই আছি এখনও। ক্লাস 11 এর প্রথম টার্ম এন্ড এ প্রথম ৫ জনের ভিতরে নিজেকে দেখে খুব ভাল লাগল। এই ভেবে সাহস বেড়ে গেল যে অন্তত মাকে তো বলতে পারব যে ওর জন্য আমি নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করিনি। অনেক জ্বালা যন্ত্রণা ও দুঃখ-সুখের ভেতর দিয়ে অবশেষে আবার কলেজ বাসে উঠে রওনা হলাম নিজের বাড়ির উদ্দেশে। বাসায় এসে দেখি যার জন্য আমার এত আকুলতা সে ই চলে গেছে তার গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে। শুরু হল আমার অপেক্ষার দ্বিতীয় প্রহর।
প্রতিটা দিন বাইরে থেকে বাসায় এলেই রাস্তা থেকে আগে ওর ঘরের জানালার দিকে তাকাতাম। যখন দেখতাম জানালা টা বন্ধ, সাথে সাথে আমার মন খারাপ হয়ে যেত। বাসায় আর কিছুই ভাল লাগত না। সারা দিন মন মরা হয়ে পড়ে থাকতাম। আমার মা বুঝতে পারত কেন আমার মন খারাপ, কিন্তু এই নিয়ে কখনো কিছু বলত না। আমিও চাইতাম না আমার মায়ের সাথে এ নিয়ে কোন কথা বলতে। অন্য প্রতি বছর রোজার ছুটিতে বাড়িতে এলে আমার খুব ভাল লাগত। এক টানা এতদিনের ছুটির মজাই আলাদা ছিল। কিন্তু এই প্রথম মনে হল ছুটির আসল আনন্দের উৎস হারিয়ে গেছে। এভাবে চলে গেল প্রায় ২০ দিন।
একদিন বিকেলে কেমিস্ট্রি পড়ে বাসায় আসার সময় দেখি ওর জানালার পাল্লা দুটো খোলা। আমার মুখটা সাথে সাথে ১০০ ওয়াট বাল্বের মত জ্বলে উঠল। দৌড়ে বাসায় এসেই ওদের ঘরের দিকে ছুটলাম। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করল “কেমন আছ?” অজানা অভিমানে আমার কোন কথা বলতে ইচ্ছা হল না। ও বুঝতে পারল আমি রাগ করে আছি। তাই আমার মন ভাল করার জন্য আমার গালে আলতো করে একটা চুমু দিল। সাথে সাথে আমার রাগ গলে পানি। আমরা আবার সেই আগের মত গল্পে মেতে উঠলাম। আমার যে এ কয়দিন মন আদৌ খারাপ ছিল তা নিজের ই মনে থাকল না।
কয়েকদিনের মধ্যেই ওদের রেজাল্ট দিল। খুব বেশি ভাল না হলেও খারাপ করেনি। আমার সবচেয়ে ভাল লাগল যখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি খুশি হয়েছি কিনা। তখন আমার মত খুশি আর কেউ ছিল না। এভাবেই চলতে থাকল আমার অসম ভালবাসা।
৯.
রেজাল্ট দেয়ার কয়েকদিন পর আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে শিমুল ঢাকা থেকে বাড়িতে এল। সেও সেবার এইচ.এস.সি দিয়েছে। সে আসার পর থেকে হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখি তানিয়া কেমন যেন বদলে গেল। আমার সাথে আগের মত তেমন একটা কথা বলেনা। ওকে বেশির ভাগ সময় ই শিমুলের সাথে দেখা যেতে লাগল, গল্প করছে। আমার খারাপ লাগলেও কখনো মুখ ফুটে কিছুই বলিনি। কেননা আমার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে খুব খারাপ লাগত। নিজেকে কেমন ছোট ছোট লাগত। কিন্তু দিন দিন তাদের মেলামেশা বেড়েই চলল। আমি নিরবে সেসব কিছুই সহ্য করে গেলাম।
ঈদের পরে একদিন সন্ধ্যার আগে আমি আমার রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। পাশে আমার মা আর আমার বোন বসে ছিল। হঠাৎ দেখি তানিয়ার মায়ের পিছনে তানিয়া আমার ঘরে এসে ঢুকল। তানিয়া এসে আমার মাথার কাছে বসল। আগে ও আমাদের বাসায় এলে সবসময় এই জায়গাতেই বসত। আমার খুব ভাল লাগল ওকে আবার সেই আগের মত আমার কাছে বসতে দেখে। একটু পরেই ও ওর হাত টা পিছনে এনে আমার বালিশের নিচে রাখল। দেখে বুঝলাম ওর হাতে কিছু আছে। আমি আমার মায়ের চোখ এড়িয়ে ওর হাতে হাত রাখলাম। ও আমার হাতে একটা কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিল। তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি অনেক দিন পর ওর কাছ থেকে আবার সেই আগের মত চিরকুট পেয়ে খুব খুশি হলাম। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পাশের ঘরে এলাম চিরকুট টা পড়ার জন্য। তাকিয়ে দেখি পেন্সিল দিয়ে কাগজটাতে কিছু লেখা আছে। আমি পড়া শুরু করলাম।
“তুহিন, তুমি এস.এস.সি দিয়ে বাসায় আসার পর আমি তোমাকে একদিন একটা গাছের পাতা তোমাকে দেখিয়েছিলাম। তাতে একটা প্রশ্ন ছিল। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে প্রশ্ন টা কার উদ্দেশে ছিল। আমি তোমাকে বলেছিলাম ওটা তোমার জন্য। আসলে ওই লেখা গুলো তোমার জন্য ছিলনা। I am sorry. আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমাকে ভুলে যেও”।
আমি হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলাম পেন্সিলে লেখা কিছু শব্দের দিকে। মনে হচ্ছিল এটা কোন চিঠি না। এটা আমার Death Note. আমি আমার বাসার বাইরে এসে তাদের ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষন পর সে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হল- “আপনাকে ধন্যবাদ”।
১০.
হঠাৎ করে জীবন টা খুব ফালতু মনে হল। মনে হল এ জীবনে বিশ্বাস বা ভালবাসা বলে আসলে কিছুই নেই। সব কিছুই মিথ্যে। নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা হল। কিন্তু কেন জানিনা বারবার দোষ গুলো সব ওর দিকে সরে যাচ্ছিল। ওর প্রতি আমার ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। কোন কারনে ওর সাথে রাস্তায় দেখা হলেই আমি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিতাম। মনে হত ওকে দেখলেই আমার পাপ হবে।
ছুটি শেষ হয়ে এল। যাওয়ার আগের রাতে আমি আমাদের বাড়িওয়ালাদের বাসায় গেলাম বিদায় নিতে। কারন আমার গাড়ি ছিল খুব সকালে। গেট দিয়ে ঢুকেই তাদের সামনের রুম এ চোখ গেল। দেখি তানিয়া ঘুমিয়ে আছে তাদের বিছানায়। সাথে সাথে রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। ইচ্ছা করছিল গলা টিপে ওকে সেখানেই মেরে ফেলি। কিন্তু পারিনি। হয়ত ওকে খুব বেশি ভালবাসতাম বলেই আমার ঘৃণা পরাজিত হয়েছিল। আমি আর ঘরে না ঢুকে কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে এলাম। এরপর আর কোনদিন আমি ওর মুখের দিকে তাকাইনি।
মখমুর দেহলভির শের টা মনে পড়ে যাচ্ছে-
“মহাব্বাত জিসকো দেতে হ্যায়,উছে ফির কুছ নেহি দেতে।
উছে সাবকুছ দিয়া হ্যায়, জিসকো ইস কাবিল নেহি সামঝা”
“জীবনে যে ভালবাসা পায়, সে আর কিছু পায়না। যে আর সবকিছু পায়, সে ভালবাসা পায় না”
- আন্টি……………একটা মেয়ে দৌড়ে ঘরে এসে ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। আর আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অপূর্ব!!! চোখ ফেরাতে পারছি না। মাথায় সেই বিখ্যাত কবিতা চলে এল-“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ”।মনে মনে নিজেকে গালাগালি দিলাম তার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য। আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু এসে মেয়েটাকে দেখে খুশি হয়ে গেল।
- আরে তানিয়া, বাইরে কেন? ভিতরে এস।
- না, আন্টি। থাক। পরে আসব।
- আরে আস তো।
মেয়েটা লজ্জাবনত মুখে ঘরে এসে বসল। আমি আম্মুর ভয়ে তার দিকে তাকাতে সাহস পেলাম না। তারপর ও আড় চোখে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আম্মু বোধহয় আমার কৌতূহল টের পেয়ে বললেন-
- ওর নাম তানিয়া। এবার এইচ.এস.সি দেবে। আর ও আমার ছেলে, তুহিন। এইবার এস.এস.সি দিয়ে কলেজ থেকে ছুটিতে এসেছে। (বুঝতে পারলাম আমাকে নিয়ে আগেও কথা হয়েছে)
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিল। আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম( এত সুন্দর একটা মেয়ে অথচ আমার সিনিয়ার, কেমন রাগ টা লাগে……গররর) তোমরা বসে গল্প কর, আমি একটু আসছি।
আম্মু পাশের ঘরে গেলেন হয়ত কিছু খাবার নিয়ে আসতে। আমি একটু অস্বস্তিতে পড়লাম কি নিয়ে কথা বলব ভেবে। আমার মত সে ও চুপ করে বসে রইল। আমাদের প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটা নিরবতা দিয়েই কাটল।
২.
দু’ তিন দিন পার হয়ে গেল এখনো তার সাথে কোন কথা হয়নি। এক বিকেলে দেখি আমাদের বাসার উঠোনে কয়েকজন ক্যারাম খেলছে। আমি কাছে গিয়ে দেখতে লাগলাম। একটু পরেই একজন চলে গেল তার মায়ের ডাকে। বাকিরা সবাই আমাকে জোরাজুরি করতে লাগল খেলার জন্য। আমি রাজি হয়ে গেলাম। যে চলে গেছে তার জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে দেখি আমার সাথে জুটি হচ্ছে তানিয়া। আমি এতক্ষন খেয়াল ই করিনি যে সে ও খেলছে।
আমি ইন্টার হাউস প্লেয়ার না হলেও খুব একটা খারাপ খেলি না। তাই একটু পরেই নিজের কারিশমা দেখান শুরু করলাম। নিজের ভিতর পার্ট অনুভূত হল(:))। সে ও অনেক ভাল খেলছিল। প্রথম সেট জেতার পর তানিয়া আমার দিকে তাকিয়ে অপূর্ব একটা হাসি দিল। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে তার ডান হাত উঁচু করে একটা হাই ফাইভ দিল। আমি তার হাতের স্পর্শে এক মুহূর্তের জন্য অনড় হয়ে ছিলাম।
- তুমি তো অসাধারণ খেল। কলেজে কি কম্পিটিশন হয়?
- হ্যাঁ।
- তুমি খেল তাতে?
- আমি ইন্টার হাউস চ্যাম্পিয়ন। (মিথ্যা বলতে একটু খারাপ লাগছিল!!!!!!!!!!)
- ওয়াও।
তার মুগ্ধ হওয়া দেখে আমার খুব ভাল লাগল। কি যে সুন্দর দেখাচ্ছিল! এরকম সৌন্দর্যের জন্য আমি হাজার টা মিথ্যা বলতে পারি। আমি আবার তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। পাশের একজনের গলা খাঁকারিতে সম্বিত ফিরে এল। তারপর আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। সেদিন সবগুলো খেলাতেই আমরা জিতেছি। এরপর থেকে নিয়মিত খেলা হত। আর বেশির ভাগ খেলাতেই সে আমার জুটি থাকত।
৩.
ইতোমধ্যে আমি বাড়িতে আসার তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তার পরীক্ষা কাছে চলে এসেছে। আর মাত্র সাত দিন বাকি। তার ভিতর কোন ভাবান্তর নেই। সে দিব্যি আছে নিজের মত। আমি মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকি। তার সাথে গল্প করি। অন্য রকম এক উন্মাদনা কাজ করে নিজের ভিতর। তার মায়ের কথায় তাকে মাঝে মাঝে ইংলিশ টা দেখিয়ে দিতাম। একদিন তাদের ঘরের সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছি, সে আমার সামনেই একটা চেয়ারে বসে পড়ছে। আমি তার একটা বই উলটে পালটে দেখছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে বলে উঠল-
- বইয়ের ভিতরে মাঝামাঝি জায়গায় দেখ একটা পাতা আছে।
আমি কিছুক্ষণ খোঁজার পর দেখি এক জায়গায় একটা গাছের পাতা। তার মাঝে কিছু লেখা। আমি পাতা টা কাছে নিয়ে এসে দেখি তাতে লেখা- “Do you love me?”
আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু কিছু বলার আগে দেখি তার ছোট ভাই চলে এসেছে। তাই আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন- “Is she serious?”
৪.
তানিয়ার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এতদিনে টের পেলাম আমার মা ওকে কত টা পছন্দ করে। এমনিতে প্রতিদিন কিছু রান্না করলেই ওর জন্য পাঠিয়ে দেয়। একদিন আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিল ওর পরীক্ষা শেষ হলে ওকে নিয়ে আসার জন্য। আমি তো অবাক। আন্টির ও দেখি তাতে সায় আছে। কি আর করা। যেদিন যেদিন পরীক্ষা থাকত আমি গিয়ে তাকে নিয়ে আসতাম। রাস্তায় হেঁটে আসার সময় অনেক গল্প হত। আমার ভালই লাগত। আমাদের একটা অদ্ভুত খেলা ছিল। প্রায় দিন ই আমরা যার যার বাসার সামনের সিঁড়িতে বসে চিরকুট চালাচালি করতাম। ডাক পিওন ছিল পাশের বাসার একটা বাচ্চা মেয়ে। খুব মজা লাগত এভাবে চিরকুট পাঠাতে। একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম সেই পাতা টার ব্যাপারে। “সেদিন যে প্রশ্ন টা করেছিলে সেটা কার উদ্দেশ্যে ছিল?” সে প্রশ্ন টা পরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর কিছু একটা লিখে আমার কাছে পাঠাল। আমি কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি তাতে লেখা-
- তোমার উদ্দেশ্যে।
- Are you serious?
- হ্যাঁ। এখন তোমার Answer দাও।
আমি অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলাম। কি উত্তর দেব তাকে? সে আমার থেকে কমপক্ষে দু’বছরের বড়।(পরে জেনেছি সে আমার থেকে নয় মাসের বড়)। আর আমার মা জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আবার তার দিকে তাকিয়ে আমি চোখ ফেরাতে পারিনা। মনে মনে তাকে আমি পছন্দ যে করিনা তা না। কিন্তু তাই বলে তার সাথে আমার সম্পর্ক হওয়াও অসম্ভব। আমি তাকে কিছুই বলতে পারলাম না। নিজেকে কেন জানিনা খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল।
৫.
ভেবেছিলাম সে হয়ত আমার সাথে আর কথাই বলবে না। কিন্তু দেখলাম আমার ধারনা ভুল। সে আগের মতই আমার সাথে গল্প করছে। আমার খুব ভাল লাগল তার ব্যাবহারে। সে হয়ত নিজে থেকেই বুঝতে পেরেছে যে এ ভালবাসা কোন দিন সম্ভব নয়। আমাদের বন্ধুত্ব আগের থেকে আরও ভাল হল। আমাকে সে অনেক কথা বলত নিজের সম্পর্কে। আমার খুব ভাল লাগত তার কথা শুনতে।
সেবার আমার জন্মদিনে বছরের প্রথম বৃষ্টি হয়। বিকেলে আমরা তাদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর ছাঁদে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ করেই কোন আগাম সংকেত না দিয়েই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে অসমাপ্ত একটা রুমে আশ্রয় নিলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টির তেজ কমে গেল। আমি বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। সে কোথা থেকে জানিনা হঠাৎ একটা টুকটুকে লাল গোলাপের কলি বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। তারপর আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে আমার ঠোঁটে আলতো করে একটা কিস করল।
- Happy Birthday to You.
সে আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আর আমি বজ্রাহতের মত সেই অন্ধকার প্রায় ঘরে দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতে একটি লাল গোলাপ নিয়ে।
৬.
আড়াই মাস পর আমার এস.এস.সির রেজাল্ট দিল। A+ পেয়ে ভালই লাগছিল। তখনও গোল্ডেন এর খবর আসেনি। আম্মু খুশিতে বাসার আশে পাশের সবাই কে মিষ্টি খাওয়াল। বিকেলে তানিয়া কে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। ওর পরীক্ষা প্রায় শেষ। আর বোধহয় একটা বাকি আছে। তাও ৫ দিন পর। আমরা এখন নিয়মিত বের হই হাঁটতে। ওর সাথে গল্প করতে খুব ভাল লাগে আমার। কিভাবে যে সময় টা চলে যায় টের ই পাইনা। আমার মাথায় যে এত গল্প ছিল আমি নিজেও আগে টের পাইনি। রাজ্যের কথা হয় ওর সাথে। গল্পের কোন শুরু-শেষ নেই।
- আমার রেজাল্টে তুমি খুশি হওনি?
- অসম্ভব খুশি হয়েছি। আমার খুব ভাল লাগছে। ইনশাল্লাহ তুমি গোল্ডেন ও পাবে, দেখ।
- দোয়া কর।
দিঘীর পাড়ে এসে বসলাম। অপূর্ব সুন্দর একটা জায়গা। আমার খুব ই ভাল লাগে এখানে এসে বসতে। তার ওপর ও সাথে থাকলে তো কথাই নেই। শুধু ওর দিকে তাকিয়েই সময় পার করে দেয়া যায়। মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছি। “মেমসাহেব” এ পড়া সেই শের এর অনুবাদ মনে পড়ে গেল-
“তুমি আমার সামনে বসে আছ, আমার সাথে কথা বলছ।
তুমিই বল তোমাকে দেখব, না তোমার সাথে কথা বলব”।
ওর ভাল লাগা, না লাগা জিনিস গুল কেন জানি নিজের সাথে মিলে যাচ্ছে। না মিললেও নিজের ভালোলাগাকে পরিবর্তন করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
- কাল আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
আমার কথা শুনেই ওর মুখটা কাল হয়ে গেল।
- কেন?
- আব্বু যেতে বলেছে। আমাকে একটা মোবাইল কিনে দেবে। তাই পছন্দ করতে যেতে হবে।
- না গেলে হয়না?
ওর কষ্ট আমাকে ছুঁয়ে গেল। খুবই খারাপ লাগছে। নিজেকে স্বার্থপর মনে হল খুব। কী দরকার যাওয়ার? নাই বা গেলাম। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারলাম না। নিজের একটা মোবাইলের আশা আমার অনেক দিনের। সে আশাটাকে জলাঞ্জলি দিতে খুব কষ্ট লাগল।
- আমাকে যেতেই হবে। মাত্র তো কয়েকদিন। তারপর ই ফিরে আসব আবার। প্লিজ তুমি আমার উপর রাগ করে থেক না।
- ধুর পাগল। আমি তোমার উপর রাগ করব কেন? তুমি যাও কয়েকদিন ঘুরে আস।
ও না বললেও বুঝতে পারছিলাম কষ্টে ওর বুক ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে স্বীকার করছে না। ওর প্রতি ভালবাসা আমার কয়েকগুন বেড়ে গেল।
৭.
ভেবেছিলাম ঢাকায় অনেক মজা হবে। কিন্তু এসে কিছুই ভাল লাগছিল না। বারবার আসার সময়কার ওর মুখটা ভেসে উঠছিল। আসার আগে ও আমার রুমে এসে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিল। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি ওর গাল বেয়ে পানির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। আমি আশে পাশে কিছু চিন্তা না করেই ওর মুখটা দু’হাত দিয়ে তুলে ধরে ওর ঠোঁটে একটা কিস করলাম। আমার পক্ষ থেকে এই প্রথম ওকে কিস করা। ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। একটু পর ই ও নিজেকে শান্ত করে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে একটা হাসি দিল।
- ভাল ভাবে যেও। আর তাড়াতাড়ি চলে এস। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। চুপ করে বসে থাকলাম। একটু পর আম্মু বাইরে থেকে এলে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম। ও আম্মুর সাথে আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগল। বাস ছাড়া পর্যন্ত তারা দাঁড়িয়েই ছিল। জানালা দিয়ে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আস্তে আস্তে ও দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। কেন জানিনা চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
আশা করেছিলাম ঢাকায় এসে নারায়ণগঞ্জ যাব। ক্লাস 6 এ ক্যাডেট কোচিং করার জন্য সেই যে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে টাঙ্গাইল এসেছিলাম আর ফেরা হয় নি। আমার স্কুল জীবনের বন্ধুদের খুব মিস করি। কিন্তু বিধি বাম। ঢাকায় এসে সাত দিন থাকলাম, একটা দিন ও বৃষ্টির জন্য বাইরেই বেরুতে পারলাম না। শুধু মোবাইল কেনাই সার হল, আর কিছুই করা হয়নি। সারাদিন ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে। কি আর করা, ব্যর্থ মনোরথে আবার বাড়িতে ফিরে এলাম।(এখন পর্যন্ত ও আমি নারায়ণগঞ্জ যেতে পারিনি :()।
বাসায় এসে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার বাসায় তানিয়াকে আর দেখা যাচ্ছে না কখনো। খুব অবাক লাগল। ওকে জিজ্ঞেস করাতে কিছুই বলল না। শেষে আমার ছোট বোনের কাছে শুনলাম কাহিনী। আমি যেদিন ঢাকা যাই সেদিন আমার এক খালাত বোন আসে আমাদের বাসায়। আমি তার আগমন টের পাইনি। আমার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সে আমাকে আর তানিয়াকে একসাথে দেখতে পায়। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি তখন তানিয়া কে কিস করছিলাম। সে কিছু না বলেই বেড়িয়ে চলে যায় বাসা থেকে। পরবর্তীতে আমি চলে গেলে বাসায় এসে আম্মুকে সব কথা বলে দেয়। আর তারপর আম্মু তানিয়ার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। তানিয়াও বুঝতে পারে যে কোন একটা সমস্যা হয়েছে, তাই সে আর আমাদের বাসায় আসে না। মনে হল নিজের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল। সব শুনে আমি পাথরের মত চুপ করে বসে রইলাম। আগের মত বাইরে বেরাতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মাঝে মাঝে আমি ওদের বাসায় যেতাম ঠিক ই কিন্তু ও আর আমার বাসায় আসত না। এদিকে আমার কলেজে যাওয়ার সময় এসে গেল। না বলা এক যন্ত্রণা নিয়ে কলেজে ফিরে গেলাম। এসে কয়েকদিনের মধ্যেই টের পেলাম জীবনে প্রথম বারের মত আমি সত্যি সত্যি কাউকে খুব বেশী ভালবেসে ফেলেছি।
৮.
কলেজে এসে অনেকদিন পর প্রিয় বন্ধু গুলোকে দেখে খুব ভাল লাগল। ছুটিতে কে কি করেছে, কে খুব সুন্দরী এক মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে, কে ইতোমধ্যেই প্রেম নিবেদন করে ফেলছে এসব জানতে জানতেই কয়েকদিন পার হয়ে গেল। চির পরিচিত সেই মাঠ আর একাডেমিক ব্লকে প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছুদিনেই নিজেকে খুব একা মনে হল। বারবার ছুটিতে কাটান তানিয়ার সাথের মুহূর্ত গুল মনে পরতে লাগল। প্রেপ টাইম এ ক্লাসের বদলে বাইরের বারান্দায় দাঁড়াতেই বেশী ভাল লাগত। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগত। মনে হত চাঁদটাও আমার মত নিঃসঙ্গ। মাঝে মাঝে মনে হত হয়ত সে ও আমার মতই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তে। দিন গুলো যেন কাটতেই চাইছিল না। বন্ধুরা শিঘ্রীই বুঝে ফেলল আমার রোগ টা কোন জায়গায়। শুরু হল আমাকে জ্বালান। তবুও যন্ত্রণা গুলো ভালই লাগত।
সবসময় ওর কথা মনে পড়লেও পরীক্ষা গুলো কিভাবে জানি ভাল হয়ে গেল। অথচ পড়া লেখার খাতায় ততটা দাগ পড়েনি, যতটা গল্পের খাতায় পড়েছে। বুঝলাম আমি জাতে মাতালদের দলে হলেও তালে ঠিক ই আছি এখনও। ক্লাস 11 এর প্রথম টার্ম এন্ড এ প্রথম ৫ জনের ভিতরে নিজেকে দেখে খুব ভাল লাগল। এই ভেবে সাহস বেড়ে গেল যে অন্তত মাকে তো বলতে পারব যে ওর জন্য আমি নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করিনি। অনেক জ্বালা যন্ত্রণা ও দুঃখ-সুখের ভেতর দিয়ে অবশেষে আবার কলেজ বাসে উঠে রওনা হলাম নিজের বাড়ির উদ্দেশে। বাসায় এসে দেখি যার জন্য আমার এত আকুলতা সে ই চলে গেছে তার গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে। শুরু হল আমার অপেক্ষার দ্বিতীয় প্রহর।
প্রতিটা দিন বাইরে থেকে বাসায় এলেই রাস্তা থেকে আগে ওর ঘরের জানালার দিকে তাকাতাম। যখন দেখতাম জানালা টা বন্ধ, সাথে সাথে আমার মন খারাপ হয়ে যেত। বাসায় আর কিছুই ভাল লাগত না। সারা দিন মন মরা হয়ে পড়ে থাকতাম। আমার মা বুঝতে পারত কেন আমার মন খারাপ, কিন্তু এই নিয়ে কখনো কিছু বলত না। আমিও চাইতাম না আমার মায়ের সাথে এ নিয়ে কোন কথা বলতে। অন্য প্রতি বছর রোজার ছুটিতে বাড়িতে এলে আমার খুব ভাল লাগত। এক টানা এতদিনের ছুটির মজাই আলাদা ছিল। কিন্তু এই প্রথম মনে হল ছুটির আসল আনন্দের উৎস হারিয়ে গেছে। এভাবে চলে গেল প্রায় ২০ দিন।
একদিন বিকেলে কেমিস্ট্রি পড়ে বাসায় আসার সময় দেখি ওর জানালার পাল্লা দুটো খোলা। আমার মুখটা সাথে সাথে ১০০ ওয়াট বাল্বের মত জ্বলে উঠল। দৌড়ে বাসায় এসেই ওদের ঘরের দিকে ছুটলাম। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করল “কেমন আছ?” অজানা অভিমানে আমার কোন কথা বলতে ইচ্ছা হল না। ও বুঝতে পারল আমি রাগ করে আছি। তাই আমার মন ভাল করার জন্য আমার গালে আলতো করে একটা চুমু দিল। সাথে সাথে আমার রাগ গলে পানি। আমরা আবার সেই আগের মত গল্পে মেতে উঠলাম। আমার যে এ কয়দিন মন আদৌ খারাপ ছিল তা নিজের ই মনে থাকল না।
কয়েকদিনের মধ্যেই ওদের রেজাল্ট দিল। খুব বেশি ভাল না হলেও খারাপ করেনি। আমার সবচেয়ে ভাল লাগল যখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি খুশি হয়েছি কিনা। তখন আমার মত খুশি আর কেউ ছিল না। এভাবেই চলতে থাকল আমার অসম ভালবাসা।
৯.
রেজাল্ট দেয়ার কয়েকদিন পর আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে শিমুল ঢাকা থেকে বাড়িতে এল। সেও সেবার এইচ.এস.সি দিয়েছে। সে আসার পর থেকে হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখি তানিয়া কেমন যেন বদলে গেল। আমার সাথে আগের মত তেমন একটা কথা বলেনা। ওকে বেশির ভাগ সময় ই শিমুলের সাথে দেখা যেতে লাগল, গল্প করছে। আমার খারাপ লাগলেও কখনো মুখ ফুটে কিছুই বলিনি। কেননা আমার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে খুব খারাপ লাগত। নিজেকে কেমন ছোট ছোট লাগত। কিন্তু দিন দিন তাদের মেলামেশা বেড়েই চলল। আমি নিরবে সেসব কিছুই সহ্য করে গেলাম।
ঈদের পরে একদিন সন্ধ্যার আগে আমি আমার রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। পাশে আমার মা আর আমার বোন বসে ছিল। হঠাৎ দেখি তানিয়ার মায়ের পিছনে তানিয়া আমার ঘরে এসে ঢুকল। তানিয়া এসে আমার মাথার কাছে বসল। আগে ও আমাদের বাসায় এলে সবসময় এই জায়গাতেই বসত। আমার খুব ভাল লাগল ওকে আবার সেই আগের মত আমার কাছে বসতে দেখে। একটু পরেই ও ওর হাত টা পিছনে এনে আমার বালিশের নিচে রাখল। দেখে বুঝলাম ওর হাতে কিছু আছে। আমি আমার মায়ের চোখ এড়িয়ে ওর হাতে হাত রাখলাম। ও আমার হাতে একটা কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিল। তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি অনেক দিন পর ওর কাছ থেকে আবার সেই আগের মত চিরকুট পেয়ে খুব খুশি হলাম। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পাশের ঘরে এলাম চিরকুট টা পড়ার জন্য। তাকিয়ে দেখি পেন্সিল দিয়ে কাগজটাতে কিছু লেখা আছে। আমি পড়া শুরু করলাম।
“তুহিন, তুমি এস.এস.সি দিয়ে বাসায় আসার পর আমি তোমাকে একদিন একটা গাছের পাতা তোমাকে দেখিয়েছিলাম। তাতে একটা প্রশ্ন ছিল। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে প্রশ্ন টা কার উদ্দেশে ছিল। আমি তোমাকে বলেছিলাম ওটা তোমার জন্য। আসলে ওই লেখা গুলো তোমার জন্য ছিলনা। I am sorry. আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমাকে ভুলে যেও”।
আমি হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলাম পেন্সিলে লেখা কিছু শব্দের দিকে। মনে হচ্ছিল এটা কোন চিঠি না। এটা আমার Death Note. আমি আমার বাসার বাইরে এসে তাদের ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষন পর সে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হল- “আপনাকে ধন্যবাদ”।
১০.
হঠাৎ করে জীবন টা খুব ফালতু মনে হল। মনে হল এ জীবনে বিশ্বাস বা ভালবাসা বলে আসলে কিছুই নেই। সব কিছুই মিথ্যে। নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা হল। কিন্তু কেন জানিনা বারবার দোষ গুলো সব ওর দিকে সরে যাচ্ছিল। ওর প্রতি আমার ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। কোন কারনে ওর সাথে রাস্তায় দেখা হলেই আমি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিতাম। মনে হত ওকে দেখলেই আমার পাপ হবে।
ছুটি শেষ হয়ে এল। যাওয়ার আগের রাতে আমি আমাদের বাড়িওয়ালাদের বাসায় গেলাম বিদায় নিতে। কারন আমার গাড়ি ছিল খুব সকালে। গেট দিয়ে ঢুকেই তাদের সামনের রুম এ চোখ গেল। দেখি তানিয়া ঘুমিয়ে আছে তাদের বিছানায়। সাথে সাথে রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। ইচ্ছা করছিল গলা টিপে ওকে সেখানেই মেরে ফেলি। কিন্তু পারিনি। হয়ত ওকে খুব বেশি ভালবাসতাম বলেই আমার ঘৃণা পরাজিত হয়েছিল। আমি আর ঘরে না ঢুকে কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে এলাম। এরপর আর কোনদিন আমি ওর মুখের দিকে তাকাইনি।
মখমুর দেহলভির শের টা মনে পড়ে যাচ্ছে-
“মহাব্বাত জিসকো দেতে হ্যায়,উছে ফির কুছ নেহি দেতে।
উছে সাবকুছ দিয়া হ্যায়, জিসকো ইস কাবিল নেহি সামঝা”
“জীবনে যে ভালবাসা পায়, সে আর কিছু পায়না। যে আর সবকিছু পায়, সে ভালবাসা পায় না”